বাড়ি অপরাধ নিখোঁজ কলেজছাত্রী ইয়াশা মায়ের অত্যাচারে বাসা ছেড়েছিলেন

নিখোঁজ কলেজছাত্রী ইয়াশা মায়ের অত্যাচারে বাসা ছেড়েছিলেন

2
নিখোঁজ কলেজছাত্রী ইয়াশা মায়ের অত্যাচারে বাসা ছেড়েছিলেন

প্রায় দুই মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ ছাত্রী ইয়াশা মৃধা সুকন্যা। একমাত্র সন্তানের সন্ধান চেয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন মা নাজমা ইসলাম লাকী। সেই নিখোঁজ কলেজছাত্রী ইয়াশার সন্ধান মিলেছে।

তাকে কেউ অপহরণ করেনি। মায়ের নির্যাতনের কারণেই স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছেন তিনি। বিয়ে করে আছেন স্বামীর সংসারেই। সম্প্রতি একটি বেসরকারি চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন তথ্য জানিয়েছেন ইয়াশা নিজেই।

মায়ের নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ইয়াশা বলেন, আমি ক্ষিধা সহ্য করতে পারতাম না। আম্মু সেটা জেনেও আমাকে দুদিন ঘরে বন্দি করে রেখেছিল। খাবারও দেয়নি। বাথরুমের পানি খেয়ে খেয়ে আমি নিজের জীবন বাঁচিয়েছি।ইশতিয়াক নামের ছেলে বন্ধুর বিরুদ্ধে মায়ের অভিযোগের বিষয়ে  ইয়াশা বলেন, সে আমার খুব ভালো বন্ধু, ওর কোন দোষ নেই। তবু তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে।

কলেজছাত্রী ইয়াশা অভিযোগ করে বলেন, আমি আর মেনে নিতে পারছিলাম না। আমি রাতে ঘুমাতেও পারতাম না। সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে আম্মু আমাকে বিক্রি করে দিচ্ছিল।তিনি বলেন, আমি বাসায় ফিরে যেতে চাই না, কারণ আমি সেখানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি।কোনসময় আমাকে মেরে ফেলবে আমি জানি না।

তিনি আরও বলেন, আমি রাতে ঘুমাতে পারতাম না ভয়ে। আমাকে বালিশ চাপা দেয়া হত। আমি আমার নানু বাসায় গেলে সেখানেও আমাকে মানসিক ভাবে অত্যাচার করা হত। নানু খালি বলত, বিয়েটা করে ফেল। সাড়ে তিনলাখ টাকা দিবে, এটা তো কম না। তুই চাইলে আরও দিবে। আমার আম্মু আমাকে সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিচ্ছিল।

কলেজ ছাত্রীর পরিবার জানায়, ঘটনার দিন মায়ের সাথে সিদ্ধেশ্বরী কলেজে পরীক্ষা দিতে যান সুকন্যা। দুপুর ১২টায় তার মা তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকিয়ে দিয়ে কলেজের অভিভাবকদের বসার রুমে অপেক্ষা করতে থাকেন। পরীক্ষা শেষ হয় ৩টায়।

পরীক্ষার্থী বের হলেও সে বের না হওয়ায় বিষয়টি তার মা কলেজের শিক্ষকদের জানান। এরপর সেদিন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে পরে রমনা থানায় জিডি করেন। এরপর দিন সেটি মামলায় রূপান্তর হয়। সেই মামলায় ইশতিয়াককে একমাত্র আসামি করা হয়েছে।

সেই সাথে আগের দিনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়। মামলা হলে রমনা থানা পুলিশ প্রেমিক ইশতিয়াক আহমেদ চিশতী ও তার বন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তেমন কোনও তথ্য মেলেনি। সেই প্রেমিক এখন কারাগারে।

এর আগে গত ২০ আগস্ট রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে নিখোঁজ ইয়াশা মৃধা সুকন্যাকে জীবিত ফিরে পাওয়ার আকুতি জানান মা নাজমা ইসলাম লাকী।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকী বলেন, ‘আমার একটাই মাত্র মেয়ে, আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ওকে ছাড়া আমি কি নিয়ে বাঁচবো। ১৬ বছর ধরে স্বামীর অপেক্ষায় আছি, তিনি এখনও বিদেশ থেকে আসেনি, এখন দুমাস ধরে মেয়ের অপেক্ষা করছি। আমি কারও কোনও বিচার চাই না, শুধু মেয়েকে ফেরত চাই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একজন মা আমি তার কাছে আকুল আবেদন করছি আমার মেয়েকে ফেরানোর ব্যবস্থা করার জন্য। ইশতিয়াক নামে যে ছেলের সাথে আমার মেয়ে সারাদিন ছিল সে নাকি ওকে সন্ধ্যায় রিকশায় তুলে দিয়েছে। তাহলে আমার মেয়ে কোথায়? আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’

More News