চীনে তীব্র দাবদাহ,খরা ও দাবানলে ‘ইয়েলো অ্যালার্ট’ জারি

চীনের ইয়াংশি নদীর উপত্যকা ঘিরে তীব্র দাবদাহ ও খরা চলছে। এতে করে অনেক জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে দাবানল। চীন সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্যশস্য রক্ষায় বিশেষ দল মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশটিতে প্রথমবারের মতো জাতীয় খরা সতর্কতা ঘোষণা করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ‘হলুদ সতর্কতা’ বা ইয়েলো অ্যালার্ট জারি করে চীনা কর্তৃপক্ষ জানায়, সাংহাইয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সিচুয়ান এলাকায় ইয়াংশি নদীর উপত্যকাগুলোতে তীব্র দাবদাহ চলছে।চীনের চংকিং অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিমের ৩৪টি কাউন্টি এলাকায় ৬৬টি নদী শুকিয়ে গেছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি গতকাল শুক্রবার জানায়, চংকিংয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমের ৩৪ টি কাউন্টি এলাকায় ৬৬ টি নদী শুকিয়ে গেছে। সাধারণ বর্ষা মৌসুমের তুলনায় এবার চংকিংয়ে ৬০ শতাংশ বৃষ্টি কম হয়েছে। অনেক এলাকায় ভূমির আর্দ্রতা বেড়েছে।

চংকিংয়ের উত্তরাঞ্চলে বেইবেই জেলায় গত বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা উঠেছে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শুক্রবার সকালেও চীনের শীর্ষ ১০টি তাপমাত্রা প্রবণ এলাকার মধ্যে চংকিংয়েই ছিল ছয়টির অবস্থান। সেখানকার বিশান জেলার তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি। এ ছাড়া সাংহাইয়ের তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

চংকিং এলাকার অবকাঠামো ও জরুরি সেবাগুলো চাপ সামলাতে হিমশমি খাচ্ছে। ওই অঞ্চলে দাবানল শুরু হওয়ায় অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে লোকজনকে হিটস্ট্রোকের বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।

এদিকে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে শুক্রবার গ্যাস ও জ্বালানি সরবরাহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। চংকিংয়ের কৃষি ব্যুরোর পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ শস্য রক্ষায় বিশেষ দলও গঠন করা হয়েছে।

দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া গত বৃহস্পতিবার জানায়, চীনের মধ্যাঞ্চলের জিয়াংশি প্রদেশের ইয়াংশি নদীর গুরুত্বপূর্ণ বন্যা অববাহিকাগুলোর একটি পোয়াং হ্রদ প্রায় শুকিয়ে গেছে। বছরের এ সময় হ্রদটির মোট আকারের এক চতুর্থাংশে নেমে গেছে।

দেশটির পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে খরা প্রবণ এলাকায় পানির সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চীনের জরুরি পরিস্থিতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, জুলাইয়ে শুধু উচ্চ তাপমাত্রায় সরাসরি অর্থনৈতিক ক্ষতির পরমিণা ২ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ইউয়ান। এতে ৫৫ লাখ মানুষের ওপর প্রভাব পড়েছে।

চীনের সরকারি কর্মকর্তারা এই পরিস্থিতির জন্য বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন। খরার কারণে চীনে জারি হওয়া হলুদ সতর্কতার বিষয়টি বেইজিংয়ের সবচেয়ে গুরুতর সতর্কতার চেয়ে দুই ধাপ কম।

এদিকে চীনের আবহাওয়া দপ্তর (এনএমসি) শুক্রবারও উচ্চ তাপমাত্রার বিষয়ে লাল সতর্কতা বা রেড অ্যালার্ট জারি করে। এ নিয়ে টানা ৩০ তিন রেড অ্যালার্ট জারি হলো। আবহাওয়াবিদেরা পূর্বাভাস দিচ্ছেন, আগামী ২৬ আগস্টের আগে এ পরিস্থিতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৪৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় এখন ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে।

বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ

Exit mobile version