বাড়ি অন্যান্য লঞ্চে বরিশালে যাওয়ার পথে মাঝনদীতে এক নারীর সন্তান প্রসব

লঞ্চে বরিশালে যাওয়ার পথে মাঝনদীতে এক নারীর সন্তান প্রসব

0
লঞ্চে বরিশালে যাওয়ার পথে মাঝনদীতে সন্তান প্রসব করেছেন এক নারী

ঢাকা থেকে লঞ্চে বরিশালে যাওয়ার পথে মাঝনদীতে সন্তান প্রসব করেছেন এক নারী। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ নামে লঞ্চের ডেকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নবজাতকটি ভূমিষ্ঠ হয়।

ঝুমুর আক্তার (২৫) নামে ওই নারীর প্রসববেদনা ওঠার পর লঞ্চের যাত্রী এক ধাত্রীর সহায়তায় জন্ম নেওয়া শিশুটির নাম রাখা হয়েছে ইব্রাহিম। ঝুমুর আক্তার বরিশাল নগরীর গড়িয়ার পাড় এলাকার বাসিন্দা মো. হারিসের স্ত্রী।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাট নদীবন্দর থেকে বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা করে। লঞ্চের নিচতলার ডেকের যাত্রী ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা ঝুমুর আক্তার, তাঁর মা ও পরিবারে অন্য সদস্যরা। নৌবন্দর ত্যাগ করার পর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঝুমুর আক্তারের প্রসববেদনা শুরু হয়। এ সময় অন্য যাত্রীরা বিষয়টি লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ঝুমুরকে কেবিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ঝুমুর আক্তার প্রসববেদনায় এতটাই কাতরাচ্ছিলেন যে তাঁকে ওই অবস্থায় সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠানোর অবস্থা ছিল না।

এমন পরিস্থিতিতে বিচলিত হয়ে ওঠেন ঝুমুরের স্বজনেরা। লঞ্চে মেডিকেল কিট থাকলেও সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা নেই। লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে তাঁরা কিছু একটা করার অনুরোধ জানিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। এ সময় লঞ্চের যাত্রীদের মধ্যে রানী বেগম (৬০) নামে এক অভিজ্ঞ ধাত্রীকে পেয়ে যান তাঁরা। ১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রানী বেগমের সহায়তায় মাঝনদীতে লঞ্চের ডেকে ছেলেসন্তান প্রসব করেন ঝুমুর। সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাতকের কান্নার শব্দ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন স্বজন ও লঞ্চের যাত্রীরা।

ঝুমুর আক্তার তাঁর স্বামীর সঙ্গে জামালপুরের কর্মস্থলে থাকতেন। প্রসবের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসায় মেয়েকে বরিশালে গ্রামের বাড়িতে আসছিলেন ঝুমুরের মা মিনু বেগম। তিনি বলেন, চিকিৎসকের নিয়মিত পর্যবেক্ষণেই ছিলেন তাঁর মেয়ে। আল্ট্রাসনোগ্রামের প্রতিবেদন অনুযায়ী সন্তানপ্রসবের সম্ভাব্য দিনক্ষণ ছিল আরও ১৮ দিন পর। কিন্তু এত আগেভাগেই সন্তানপ্রসব হবে, এটা ভাবতে পারেননি তাঁরা। আকস্মিক সন্তানপ্রসবে তাঁরা খুশি।

ঐদিকে বরিশাল নগরের সাগরদী এলাকার বাসিন্দা রানী বেগম কিছুদিন আগে ঢাকায় মেয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতে ফিরছিলেন তিনি এই লঞ্চেই। রানী বলেন, তিনি সন্তানপ্রসবের কাজে ১৫ বছরের অভিজ্ঞ। বহু নারীর সন্তানপ্রসবে সহায়তা করেছেন। কিন্তু মাঝনদীতে গভীর রাতে কোনো নারীর সন্তানপ্রসবে সহায়তার ঘটনা তাঁর জীবনে এটাই প্রথম। সাহস নিয়ে তিনি ধাত্রীর কাজটি করেছেন। মা ও শিশু দুজনই সুস্থ আছে, এটাই আনন্দের।

এ ঘটনায় লঞ্চমালিকের পক্ষ থেকে নবজাতককে ১০ হাজার টাকা উপহার দেওয়া হয়। পাশাপাশি নবজাতক ও তার মা–বাবার এই লঞ্চে আজীবন বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের পরিদর্শক জিল্লুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বাংলা ম্যাগাজিন / এমএ

More News