বাড়ি অপরাধ মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে সাতজন গুলিবিদ্ধ

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে সাতজন গুলিবিদ্ধ

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে সাতজন গুলিবিদ্ধ

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আজ সোমবার ভোর চারটা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুপক্ষের অন্তত ২৮ জন। এ সময় গোলাগুলি, ককটেল বিস্ফোরণ ও ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিরা হলেন হানিফ মোল্লা (৩৮), কালাম হোসেন (২৮), সেরাজল ব্যাপারী (৬৫), মো. রনি (১৮), রুবেল হোসেন (১৮), মো. হোসেন (১৬) ও মতিন ঢালি (৩০)। এ ছাড়া জামাল হোসেন (১৬), সাজেদা বেগম (৭৫) নামে আরও দুজন আহত ব্যক্তির নাম জানা গেছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সেরাজল, হানিফ ও কালামকে গুরুতর অবস্থায় মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান রিপন হোসেন ও সাবেক চেয়ারম্যান মোহসিনা হকের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। রিপন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মোহসিনা হক সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক।

এ নিয়ে গত ১০ বছরে এ দুজনের সমর্থকদের মধ্যে শতাধিক সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। পূর্ববিরোধের জেরে আজ ভোর থেকে ইউনিয়নের মহেশপুর, পূর্ব মাকহাটি, নোয়ার্দা, লক্ষ্মীবিবি, বেহেরকান্দি ও মুন্সিকান্দি এলাকায় কয়েক দফা সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ।

সংঘর্ষের বিষয়ে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিপন হোসেন বলেন, ‘মোহসিনা হক ইউপি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় পুরো ইউনিয়নে মাদক, বালুর ব্যবসাসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। পুরো এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল।

আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে সে কোনো অবৈধ ব্যবসা করতে পারছে না। এ জন্য আমার লোকজনের ওপর বেছে বেছে হামলা করছে।’ তিনি জানান, প্রতিপক্ষের হামলায় তাঁর ১৫-২০ কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। তাঁদের অনেককেই চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. রুহুল আমিন বলেন, আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাতজন হাসপাতালে আসেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েক বাসিন্দা এ প্রতিবেদককে বলেন, রিপন হোসেন ও মোহসিনা হকের বিরোধের কারণে কিছুদিন পরপরই সংঘর্ষ হওয়ায় এলাকার মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারছেন না।

যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁদের অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। যাঁরা যেতে পারছেন না, তাঁরা ভুক্তভোগী হচ্ছেন। এলাকায় থাকতে হলে কোনো না কোনো পক্ষে যেতে হয়। না গেলেও হামলা-মামলার শিকার হন তাঁরা।

মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু বক্কর সিদ্দিক আজ দুপুরে বলেন, আধিপত্য নিয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

কোনো পক্ষই এ পর্যন্ত অভিযোগ করেনি। সংঘর্ষে যাঁরা জড়িত, তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তিনি বলেন, এলাকার শান্তির জন্য দুই পক্ষের প্রধান যাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ পাওয়া যাবে, এবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে।

তবে সংঘর্ষের কারণ হিসেবে রিপন হোসেনের করা অভিযোগকে ‘পুরোপুরি মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন মোহসিনা হক। রিপনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, মূলত রিপন হোসেন নিজের দখলদারিত্ব কায়েম করতে তাঁর লোকজনদের মেরে এলাকাছাড়া করছে।

তিনি বলেন, ‘আজ ভোরে তাঁদের লোকজন আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করে, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়, গুলি করে। আমাদের কমপক্ষে আটজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন ঢাকায় ভর্তি আছেন। পুলিশ প্রশাসনকে বারবার বলেও সমস্যার সমাধান পাচ্ছি না।’

Exit mobile version