বাড়ি এক্সক্লুসিভ সয়াবিন তেলের পর এবার দেশের উত্তরাঞ্চলে পেট্রোল ও অকটেনের সংকট

সয়াবিন তেলের পর এবার দেশের উত্তরাঞ্চলে পেট্রোল ও অকটেনের সংকট

5
সয়াবিন তেলের পর এবার দেশের উত্তরাঞ্চলে পেট্রোল ও অকটেনের সংকট

সয়াবিন তেলের পর এবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পেট্রোল ও অকটেনের সংকট দেখা দিয়েছে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই পেট্রোল-অকটেন বন্ধ রাখা হচ্ছে ফিলিং স্টেশনগুলো। কেউ স্টেশনের মেশিন কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন, আবার কেউ জ্বালানি (পেট্রোল-অকটেন) নেই মর্মে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন। আর এই সুযোগে জ্বালানি তেলের দাম বেশি রাখছেন খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা। 

রাজশাহী মহানগরী ও জেলার ৯টি উপজেলায় ৪৮টি তালিকাভুক্ত পেট্রোল পাম্প রয়েছে। কিন্তু পাম্প মালিকদের ভাষ্যমতে, গত প্রায় তিন মাস থেকে তারা পর্যাপ্ত পরিমাণ পেট্রোল-অকটেন সরবরাহ পাচ্ছেন না। বিশেষ করে ঈদ-উল ফিতরের ছুটির পর জ্বালানি সংকট বেশি বেড়েছে। এজন্য পাম্পগুলো তেল শূন্য হয়ে পড়ে আছে।

মূলত সিন্ডিকেট করে এখন পেট্রোল-অকটেনের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে পাম্প মালিকদের বিরুদ্ধে। ঈদের আগে চাহিদার তুলনায় কম পরিমাণে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল বিক্রি হয়েছে। তাই ঈদের পর মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহন চালকরা ভোগান্তি ও বিড়ম্বনায় পড়েছেন।

মূলত ঈদের ছুটির পর থেকে হঠাৎ পেট্রোল-অকটেন উধাও হয়ে গেছে। রাজশাহী মহানগরীর বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো পাম্পেই মিলছে না পেট্রোল-অকটেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিছু পাম্পে পেট্রোল আছে তো অকটেন নেই, অকটেন আছে তো পেট্রোল নেই।

হঠাৎ করে পেট্রোল-অকটেন সংকটের কারণে চরম বেকায়দায় পড়েছেন হালকা যানবাহনের চালকরা। পাম্পে পাম্পে ঘুরে জ্বালানি না পেয়ে অনেকেই মোটরসাইকেল বা হালকা যানবাহন গ্যারেজ থেকে বের করতে পারছেন না। আর এই সুযোগে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা পেট্রোল-অকটেন বোতলজাত করে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন। 

একই চিত্র উত্তরের জেলা গাইবান্ধাতেও। সরবরাহ না থাকায় গাইবান্ধার ফিলিং স্টেশনগুলো বন্ধ রয়েছে। শনিবার (৭ মে) সকাল ৮টা থেকে এই অবস্থা চলছে। কোনো ফিলিং স্টেশনে পেট্রোল ও অকটেন নেই। ফলে মোটরসাইকেল চালকরা ফিলিং স্টেশনে গিয়ে পেট্রোল ও অকটেন না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। 

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলায় ১০টি ফিলিং ষ্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশনে প্রতিদিন এক লাখ লিটার পেট্রোল ও অকটেনের চাহিদা রয়েছে। রবিবার (৮ মে) দুপুরে গাইবান্ধা শহরের ফিলিং স্টেশনগুলো ঘুরে দেখা গেছে, স্টেশনের মেশিনগুলো কালো কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

কর্মকর্তা-কর্মচারিরা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। মোটরসাইকেল চালকরা পেট্রোল কিনতে গিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। যারা ঈদের আগে মোটরসাইকেলের তেল নিয়েছিলেন, তাদেরও মজুত শেষ। জ্বালানির অভাবে শহরে মোটরসাইকেল চলাচলও কমে গেছে। 

সংকট শুরুর পর থেকে পেট্রোল না থাকায় বাধ্য হয়ে বিকল্প হিসেবে অকটেন ব্যবহার করছিল বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা। তবে বৃহস্পতিবার থেকে কিছু ফিলিং স্টেশনে অকটেন নেই জানিয়ে স্টেশন বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কি কারণে পেট্রোল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে তার সঠিক উত্তর দিতে পারে না ফিলিং স্টেশন কর্তৃপক্ষ।

তীব্র পেট্রোল সংকটে পড়েছে ঠাকুরগাঁও। প্রায় এক সপ্তাহ থেকে জেলা জুড়ে ফিলিং স্টেশনগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না পেট্রোল। এ ব্যাপারে কোনো ঘোষণা না থাকায় পাম্পে এসে পেট্রোল না পেয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়ছে পেট্রোল চালিত যানবাহনের চালকেরা। পেট্রোল পাম্প কর্তৃপক্ষ এবং খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ডিপো থেকে পেট্রোল সরবরাহ বন্ধ থাকায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। কবে নাগাদ এই সমস্যার সমাধান মিলবে তা কেউ বলতে পারছেন না।

এদিকে পাম্পে তেল না থাকলেও বর্তমানে খুচরা বাজারে কিছু দোকানে বেশি দামে পেট্রোল-অকটেন তেল মিলছে। তবে এজন্য লিটার প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি গুণতে হচ্ছে ক্রেতাদের। আবার কোনো কোনো এলাকার পেট্রোল পাম্পে সরকার নির্ধারিত দরে সীমিত পরিসরে লিটার প্রতি পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে ৮৬ টাকা ৭৭ পয়সা ও অকটেন বিক্রি হচ্ছে ৮৯ টাকায়।

ঠাকুরগাঁও পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনামুল হক জানান, জেলায় ফিলিং স্টেশনের সংখ্যা ৩৬টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৪, বালিয়াডাঙ্গি উপজেলায় দুই, হরিপুর উপজেলায় দুই, রাণীশংকৈল উপজেলায় চার ও পীরগঞ্জ উপজেলায় চারটি ফিলিং স্টেশন রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলায় দৈনিক পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেলের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার লিটার। এর মধ্যে পেট্রোল ২৩ হাজার লিটার, অকটেন সাড়ে ১৬ হাজার লিটার ও ডিজেলের চাহিদা ৫০ হাজার লিটার। এখন জেলায় প্রায় ১৪ হাজার লিটার পেট্রোল সরবরাহ কম হচ্ছে। ফলে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।

রাজশাহী পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মমিনুল হক অবশ্য বলেন, ঈদের আগে কোনোভাবে ক্রেতাদের চাহিদা কমবেশি করে পূরণ করা গেলেও ঈদের পর আর তা সম্ভব হয়নি। অনেক পাম্পই পেট্রোল-অকটেন শূন্য হয়ে গেছে। যেখানে পাম্পে নয় থেকে সাড়ে নয় হাজার লিটার তেলের চাহিদা থাকে, সেখানে দুই থেকে তিন হাজার পেট্রোল সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে।

তাই সংকট তৈরি হয়েছে। অনেক সময় অকটেন পাওয়া গেলেও পেট্রোল পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ পেট্রোলেরই চাহিদা বেশি। আর পেট্রোল-অকটেনের পাশাপাশি ডিজেলেরও সংকট রয়েছে। তাই সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ সংকট থাকবে। তিনি আরও বলেন, এখানে মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরির কোনো উপায় নেই।

কারণ জ্বালানি তেল মারাত্মক দাহ্য পদার্থ। এটি পেট্রোল পাম্প ছাড়া যেখানে সেখানে বেশি পরিমাণে মজুতের কোনো উপায় নেই। যারা মজুতের কথা বলছেন তারা ভুল বলছেন। মূলত পেট্রোল সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ সংকট কাটবে না।