এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি সিলেটের গণধর্ষিতা সেই নারী

এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি সিলেটের সেই গণধর্ষিতা। বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না। শরীরের ডান অংশ ও ডান পা অবশ। আবোল-তাবোল বকছেন। অগোছালো কথাবার্তার মধ্যে পুলিশ এক ধর্ষকের নাম জেনেছিল। ওই ধর্ষক এলাকার চিহ্নিত অপরাধী। বহু ঘটনার হোতা সে। প্রাথমিকভাবে পুলিশ গ্রেপ্তার হওয়া নরপশুর মুখ থেকে ৩ জনের নাম পেয়েছে।

ঘটনা গত ১৪ই জানুয়ারি রাতে। ওইদিন রাত ১০টায় স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন মনির মিয়া। ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখেন স্ত্রী নেই। খোঁজ করেন বাড়িতে, কোথাও পাওয়া যায়নি। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতেও নেই। সবাই খুঁজছেন কিন্তু পাচ্ছেন না। 

এরইমধ্যে গ্রামের রাস্তায় মিললো স্ত্রীর ওড়না ও স্যান্ডেল। রহস্য আরও ঘনীভূত হলো। রাত পর্যন্ত খুঁজে না পেয়ে গোলাপগঞ্জ থানায় এ নিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন নির্যাতিতা মহিলার ভাই আব্দুল লতিফ। এরপর নিখোঁজের দুইদিন পর ১৬ই জানুয়ারি অজ্ঞান, উলঙ্গ অবস্থায় ওই নারীকে পাওয়া যায় গ্রামের কৃষি জমিতে। উদ্ধার করে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

কিন্তু ঘটনার এক মাস অতিবাহিত হলেও আসামী এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। সিলেটের গোলাপগঞ্জের পনাইরচক গ্রামে ঘটে এই আলোচিত ঘটনা। যারাই নির্যাতিত নারীকে দেখছেন তারাই আঁতকে উঠছেন। পনাইরচক গ্রামের মনির আহমদ। বিয়ে করেছেন ২৫-২৬ বছর আগে। সন্তান নেই। এরপরও তাদের সংসারে সুখ রয়েছে। দিনমজুর মনির মিয়া বসবাস করেন গ্রামের মুছন আলীর বাড়িতে। ওই সম্পত্তি দেখভাল করেন তিনি। 

স্বামী মনির মিয়া জানান, উদ্ধারের সময় তার স্ত্রী ছিলেন উলঙ্গ। কোনো জ্ঞান ছিলনা। শরীরের বিভিন্নস্থানে জখমের চিহ্ন। হাসপাতালে ভর্তি করার পরদিন তার জ্ঞান ফিরলেও কথা বলতে পারছিল না। মনিরের ধারণা, নিখোঁজের দিন রাতে তার স্ত্রী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বের হয়েছিলেন। আর এ সময় তাকে অপরহরণ করা হয়েছে।

হাসপাতালে থাকা অবস্থায়ই নির্যাতিতা এ নারীর সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। এরইমধ্যে একজনের নাম পায় পুলিশ। নির্যাতিতা মহিলাই ওই নাম বলেছে। ঘটনার প্রায় ২০ দিনের মাথায় গত ৬ই ফেব্রুয়ারি পুলিশ লিলু মিয়া নামের এক ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে। গোলাপগঞ্জ পৌর শহরের চৌমুহনী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

স্বামী মনির মিয়া জানান, তার স্ত্রীর মাথার ডানপাশে ভারী আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ কারণে শরীরের ডান অংশ ও ডান পা অচেতন হয়ে পড়েছে। এরপর নরপশুরা আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়েছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নির্যাতনের কারণে এখনো বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না তার স্ত্রী। শরীরের ডান অংশ ও ডান পা পুরোপুরি অবশ। 

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত লিলু মিয়া এলাকার চিহ্নিত অপরাধী। তার নেতৃত্বে এলাকার একটি অপরাধী চক্র রয়েছে। তারা এলাকার নানা ঘটনার হোতা। তার বিরুদ্ধে ১২টি মামলার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর লিলু ঘটনাটির ব্যাপারে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। কিছু ক্লু পাওয়া গেছে লিলুর মুখ থেকে। তবে ঘটনা সম্পর্কে পুরোপুরি মুখ না খোলায় লিলু মিয়ার রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ। 

মামলার বাদী ও নির্যাতিতা ওই নারীর ভাই পনাইরচক গ্রামের আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন; বোন নিখোঁজের পর জিডি করেছিলাম। উদ্ধারের পর পুলিশ মামলা রেকর্ড করেছে। পুলিশই নির্যাতিতার মুখ থেকে এক জনের নাম পেয়েছে। আরও কয়েকজনের নামও ইতিমধ্যে এসেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তিনি। বলেন, এই ঘটনার পর এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও স্থানীয় কুশিয়ারা তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ওসি এহতেশামুল ইসলাম  জানিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে লিলু ছাড়াও আরও ৩ জনের নাম পুলিশ পেয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। লিলু মিয়াকে রিমান্ডে এনে ঘটনার পুরো তথ্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা চালানো হবে। আজ আদালতে রিমান্ড শুননি হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি জানান, ওই নারীকে নির্যাতন করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

কুশিয়ারা তীরবর্তী এলাকা শরীফগঞ্জ। রিভারবেল্ট হিসেবে ওই এলাকা পরিচিত। এক সময় অপরাধ এবং অপরাধীদের অভয়ারণ্য ছিল ওই এলাকা। ডাকাতির ঘটনা ছিল নিত্যনৈমিত্তিক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ওখানে এরইমধ্যে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে। এরপরও অপরাধীরা এলাকায় বেপরোয়া রয়েছে। এ নিয়ে চিন্তিত জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় মানুষ।

শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কবির জানিয়েছেন, ঘটনার পর তিনি হাসপাতালে গিয়ে নির্যাতিত নারীকে দেখে এসেছেন। অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক ঘটনা। ঘটনার পর থেকে মহিলা স্মৃতিহারা অবস্থায় রয়েছেন। এলাকার মানুষও ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।   

Exit mobile version