বাড়ি অপরাধ সাতকানিয়ায় পছন্দের প্রার্থীদের জয়ী করতেই সহিংসতা

সাতকানিয়ায় পছন্দের প্রার্থীদের জয়ী করতেই সহিংসতা

1
সাতকানিয়ায় পছন্দের প্রার্থীদের জয়ী করতেই সহিংসতা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতায় জড়িত আটজনকে অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ওই নির্বাচনে ভাড়া করা অস্ত্র দিয়ে ব্যাপক সহিংসতা চালায় তারা।মূলত পছন্দের দুই প্রার্থীকে জয়ী করতে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে দুজন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, সাতকানিয়ায় সহিংসতায় জড়িতরা কেউ গাড়িচালক, কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ বেসরকারি কম্পানির কর্মচারী, কেউ ফুল বিক্রেতা এবং কেউ জমির দালাল। এসব বৈধ পেশার আড়ালে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডেও জড়িত।

র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, সপ্তম ধাপে খাগরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যারা সহিংসতা  ও নাশকতা চালায়, গণমাধ্যমে তাদের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার রাতে র‌্যাব-২, র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১৫ অভিযান চালিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আটজনকে গ্রেপ্তার করে।

এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। মামলায় চিহ্নিত অস্ত্রধারীদের আসামি করা হয়। গত সোমবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই আটজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

তবে প্রার্থীরা ওই সন্ত্রাসীদের সহিংসতার নির্দেশনা দিয়েছিলেন কি না, এখনো তা জানা যায়নি। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আগেও বিভিন্ন মামলা ছিল। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া, বাজালিয়া, নলুয়া, সোনাকানিয়াসহ কয়েকটি ইউনিয়নে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দেয় বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকরা। বাজালিয়া ইউনিয়নে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে অংশ নিয়ে গোলাগুলিতে প্রাণ হারান বহিরাগত এক ব্যক্তি। নলুয়ায় এক শিশুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

খাগরিয়া ইউনিয়নে দুটি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। এসব সহিংস ঘটনায় অন্তত ২৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি নির্বাচনকেন্দ্রিক। মূলত আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনুসারীদের মধ্যে এই সহিংসতা হয়।

র‌্যাব-১৫ বান্দরবানের গহিন জঙ্গল থেকে নাসির উদ্দিনকে (৩১) গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া তথ্যে সাতকানিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মোরশেদ (২৬), কোরবান আলী (৩৭) ও  ইসমাইলকে (৫৫)। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ধার করা হয় ঘটনাস্থলে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র ও কার্তুজ।

একই রাতে র‌্যাব-৭-এর একটি দল চট্টগ্রাম মহানগরীর চন্দনাইশ থেকে জসিম (২৪) ও তাঁর সহযোগী মিন্টুকে (২৬) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের তথ্যে সহিংসতার মূল হোতা কায়েসকে (২২) রাজধানীর তেজকুনীপাড়া থেকে সহযোগী নুরুল আবছারসহ (৩৩) গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা সহিংসতায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

গ্রেপ্তার কায়েস ও নাসির ওই হামলায় নেতৃত্ব দেন। বিভিন্নভাবে অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করেছেন কায়েস। পরে তিনি তাঁর আস্থাভাজনদের সেগুলো দেন। কাজ শেষে আবার অস্ত্রগুলো নিয়ে নেন। কায়েস কাদের কাছ থেকে অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করেছেন তার কিছু তথ্য র‌্যাব পেয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

সন্ত্রাসী এই গ্রুপটির নেতা মো. কায়েস। দুই বছর ধরে তিনি চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় সাতকানিয়ায় সংঘটিত সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেন। কায়েস একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ গড়ে তুলেছেন। ৭ ফেব্রুয়ারির হামলায়ও নেতৃত্ব দেন কায়েস। অস্ত্রগুলো তিনি বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করে নিজের লোকদের দেন। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রেপ্তার জসীম, মিন্টু, মোরশেদ ও আবছার সহিংসতা চালান। পরে কায়েস পালিয়ে ঢাকায় এসে গ্রেপ্তার আবছারের কাছে ছিলেন।

জানা গেছে, কায়েস নৌকার প্রার্থী আকতার হোসেনের ছোট ভাই। মোটরসাইকেল মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী জসিম উদ্দিনের সমর্থকদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়েছিল। জসিমের সমর্থকদের কেউ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।

গ্রেপ্তার নাসির চট্টগ্রামে একটি কম্পানির বন্দর শাখার কর্মচারী। এই নির্বাচনী সহিংসতায় তিনি একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছেন। মেরুন রঙের মাফলার ও মুখে লাল-সবুজ রঙের মাস্ক পরে একনলা বন্দুক হাতে তিনি সহিংসতায় অংশ নেন। পরে তিনি বান্দরবানের জঙ্গলে আত্মগোপন করেন।

গ্রেপ্তার আবছার ঢাকার একটি কম্পানির (কাভার্ড ভ্যান সমিতি) ম্যানেজার। সাতকানিয়ায় কোনো ধরনের সহিংসতার খবর পেলেই এলাকায় চলে যেতেন তিনি। কায়েসের নির্দেশে খাগরিয়া ইউপি নির্বাচনে সহিংসতায় জড়ান তিনি। ঘটনার পর কায়েসহ ঢাকায় চলে আসেন। তিনিও একাধিক মামলার আসামি।

গ্রেপ্তার মোরশেদ কায়েস গ্রুপের অন্যতম সদস্য। পেশায় তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক। ঘটনার দিন একনলা বন্দুক নিয়ে নাশকতায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি।গ্রেপ্তার জসিম পেশায় রাজমিস্ত্রি। পাশাপাশি তিনি খাগরিয়া এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। সহিংসতার সময় তিনি লাল জ্যাকেট পরিহিত অবস্থায় একটি বস্তায় গোলাবারুদ নিয়ে মোরশেদের পাশে ছিলেন।

গ্রেপ্তার মিন্টু মাইক্রোবাসচালক। কায়েসের নির্দেশে সহিংসতায় অংশ নিতে ৩০ থেকে ৪০ জন বহিরাগতকে তিনি দুটি কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। তাঁর গাড়িতে করেই ঘটনাস্থলে আনা হয় অস্ত্র।র‌্যাব আরো জানায়, গ্রেপ্তার কোরবান আলী নিরাপত্তাকর্মী। সহিংসতার দিন তিনি লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর বাসা থেকে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ইসমাইল জমির দালাল। সহিংসতায় তিনি লাঠিসোঁটা নিয়ে অংশ নিয়েছিলেন।