বান্দরবানে সেনাবাহিনী- জেএসএস এর গোলাগুলি, সেনাসদস্যসহ নিহত ৪

বান্দরবানের রুমা জোনের একটি টহল দলের সঙ্গে সন্তু লারমা সমর্থিত জেএসএস মূল দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলি বিনিময়ের ঘটনায় সেনাবাহিনীর একজন সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার সহ তিনজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় একজন সেনা সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় বান্দরবানের রুমা সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বথিপাড়ার পার্শ্ববর্তী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত সেনাসদস্যের নাম হাবিবুর রহমান। তিনি বাহিনীটির সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার। আহত সৈনিকের নাম মো. ফিরোজ। নিহত অপর তিন সন্ত্রাসীর এখনো পরিচয় পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জেএসএস সন্ত্রাসীদের একটি দল রুমা উপজেলার বথিপাড়া এলাকায় চাঁদাবাজির জন্য আসবে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে রাইং খিয়াং লেক আর্মি ক্যাম্প হতে সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবের নেতৃত্বে একটি টহল দল বথিপাড়ার উদ্দেশে যায়। গতকাল রাত আনুমানিক ১০টা ৩০ মিনিটে টহল দলটি ওই এলাকায় পৌঁছালে পাড়ার নিকটস্থ একটি জুম ঘর থেকে সন্ত্রাসীরা অতর্কিত গুলি বর্ষণ করে। জবাবে সেনা টহল দলের সাহসী পাল্টা হামলায় সন্তু লারমার মদদপুষ্ট জেএসএস মূলদলের তিনজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়।

সেনাবাহিনী’র বান্দরবান ব্রিগেড অফিস থেকে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বান্দরবানের রুমা জোনের একটি টহল দলের সঙ্গে জেএসএসের মূল দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিবিনিময়ের ঘটনায় সেনাবাহিনীর একজন সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসারসহ তিনজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন আরেক সেনা সদস্য। 

এ সময় পলায়নপর সন্ত্রাসীদের এলোপাথাড়ি গুলিতে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে টহল কমান্ডার সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন এবং সৈনিক ফিরোজ নামে একজন সেনাসদস্য ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। আহত সেনা সদস্যকে আজ সকালে রুমা হতে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে।

ওই অভিযানে সেনা টহল দল কর্তৃক সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত ১ টি এসএমজি, ২৭৫ রাউন্ড তাজা গুলি, ৩ টি এ্যামোনিশন ম্যাগাজিন, ৩টি গাদা বন্দুক, গাদা বন্দুকের ৫ রাউন্ড গুলি, ৪ জোড়া ইউনিফর্ম এবং চাঁদাবাজির নগদ ৫২ হাজার ৯০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে সেনা টহল দল ওই এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি জারি রেখেছে এবং স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।

অভিযানে সেনা টহল দল সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত একটি এসএমজি, ২৭৫টি তাজা গুলি, তিনটি এম্যোনিশন ম্যাগাজিন, তিনটি গাদা বন্দুক, গাদা বন্দুকের পাঁচটি গুলি, চার জোড়া ইউনিফর্ম এবং নগদ ৫২ হাজার ৯০০ টাকা উদ্ধার করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সেনাবাহিনীর রুমা জোনের আওতাধীন বথিপাড়া এলাকায় সন্ত্রাসী বাহিনীর চারটি দল সন্ত্রাসী তৎপরতা চালায়। নিরাপত্তা বাহিনী যেকোনো সন্ত্রাসী তৎপরতা নির্মূলে সব সময় কাজ করছে।সন্ত্রাসীরা জনসংহতি সমিতির মূল দলের সদস্য বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও এ বিষয়ে জনসংহতি সমিতির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির অনুচ্ছেদ ঘ এর ধারা অনুযায়ী সকল অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার মাধ্যমে তৎকালীন শান্তিবাহিনী সকল সদস্যের আত্মসমর্পণের শর্ত থাকলেও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস তা ভঙ্গ করে চুক্তি সম্পাদনের পরবর্তী সময় হতেই সশস্ত্র সন্ত্রাসী লালন করে আসছে। যদিও প্রায়শ সন্তু লারমা ও তার দল সরকারের বিরুদ্ধে শান্তি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ ও বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ করে থাকে।

বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে তৎপর চারটি আঞ্চলিক দল হত্যা, গুম, চাঁদাবাজি ইত্যাদি দুষ্কৃতমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মাধ্যমে পাহাড়ের নিরীহ সাধারণ মানুষের জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। পাশাপাশি সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ হতে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড সৃষ্টি পাঁয়তারা করছে, যা নিঃসন্দেহে দেশদ্রোহিতার শামিল। এ পরিস্থিতিতে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী বুকের রক্ত দিয়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর।

Exit mobile version