শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে উপাচার্যের বাসা থেকে ফেরত গেলেন শিক্ষকেরা

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন প্রক্টর আলমগীর কবিরসহ কয়েকজন শিক্ষক। তবে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে আজ সোমবার সন্ধ্যায় ফটক থেকেই সঙ্গে আনা খাবার নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে তাঁদের।

রোববার সন্ধ্যার পর থেকে মানবদেয়াল তৈরি করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থা নেন শিক্ষার্থীরা। বাসভবনে কাউকে প্রবেশ করতে বা বের হতে দিচ্ছেন না তাঁরা।এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গত বুধবার থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ কয়েকজন শিক্ষক উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের দেখতে যান। এ সময় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন অনশনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানিয়ে এলেও শিক্ষকেরা অনশনকারীদের সামনে বারবার খাবার নিয়ে আসছেন।

এসব কথা বলার পর শিক্ষকেরা উপাচার্যের বাসভবনের দিকে প্রবেশ করতে যান। এ সময় শিক্ষার্থীরা বাসভবনের সামনে মানবপ্রাচীর তৈরি করে প্রক্টরসহ শিক্ষকদের পথরোধ করেন। শিক্ষকেরা ভেতরে যেতে দেওয়ার অনুরোধ করলেও শিক্ষার্থীরা তাতে বাধা দেন।প্রক্টর বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের অনুরোধ রাখেননি। আমরা আমাদের দায়িত্বের জায়গা থেকে উপাচার্য এবং অন্য শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। সে জন্য বারবার অনুরোধ করলেও সেটি শিক্ষার্থীরা রাখেননি।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা রোববার থেকে ঘোষণা দিয়েছি পুলিশ কিংবা সংবাদকর্মী ছাড়া কাউকে উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এদিকে আমরা এক দফা দাবি জানিয়ে প্রায় ১২৫ ঘণ্টা ধরে টানা অনশন করা আসছি। এরপরও শিক্ষকেরা বারবার খাবার নিয়ে আসছেন। সেগুলো অমানবিক।’

বাসভবনের সামনে থেকে ফিরে এসে প্রক্টর আলমগীর কবির সাংবাদিকদের বলেন, উপাচার্য হৃদ্‌রোগজনিত সমস্যায় ভুগছেন। এর জন্য তিনি নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন। কয়েক দিন ধরে তিনি বাসভবনে থাকায় ওষুধপত্র শেষ হয়ে এসেছে। এ ছাড়া রোববার রাতে বিদ্যুৎ–সংযোগ কেটে দেওয়ায় অন্ধকারে কাটিয়েছেন। বাসভবনের ভেতরে কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা–কর্মচারী রয়েছেন। তাঁদের জন্য কিছু খাবার ও দেখা করতে চেয়েছিলেন তাঁরা।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ১৬ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন।

তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে ও তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

Exit mobile version