বাড়ি অপরাধ অস্ত্রোপচারের পর পেটের মধ্যেই কাঁচি রেখে সেলাই

অস্ত্রোপচারের পর পেটের মধ্যেই কাঁচি রেখে সেলাই

অস্ত্রোপচারের পর পেটের মধ্যেই কাঁচি রেখে সেলাই

ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক তরুণীর অস্ত্রোপচারের পর পেটের মধ্যেই কাঁচি রেখে সেলাই করে দেওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটে ২০২০ সালের ৩ মার্চ। ওই ঘটনার ৬৪৩ দিন পর আজ শনিবার ওই হাসপাতালেই পুনরায় অস্ত্রোপচার করে তরুণীর পেট থেকে আনুমানিক ছয় ইঞ্চি লম্বা আকৃতির ওই কাঁচি বের করা হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ওই হাসপাতালের পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি করা হবে। কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।মনিরার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে অস্ত্রোপচারকারী এক চিকিৎসক বলেন, ৭২ ঘণ্টার আগে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

ওই তরুণীর নাম মনিরা খাতুন (১৯)। তিনি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ঝুটিগ্রামের বাসিন্দা খাইরুল মিয়ার মেয়ে। দুই ভাই ও দুই বোনের মনে মনিরা তৃতীয়।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৩ মার্চ ওই হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ ইউনিট ২–এর সহযোগী অধ্যাপক মোল্লা সরফউদ্দিনের অধীন ভর্তি ও অস্ত্রোপচার করা হয় মনিরার। তরুণীটি মেজিনট্রিক ফিস্টজনিত (রক্তের দলা) সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই সময় তরুণীর পেটের মধ্যে চিকিৎসকদের অজ্ঞাতসারে ছয় ইঞ্চি লম্বা মিডিয়াম সাইজ অর্টারি ফরসেপ রেখে সেলাই করা হয়।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মনিরার অস্ত্রোপচার করা হয়। এতে অংশ নেন সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক রতন কুমার সাহা, সহযোগী অধ্যাপক মোল্লা সরফউদ্দিন ও রেজিস্ট্রার সালেহ মো. সৌরভ। তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে মনিরার পেট থেকে কাঁচিটি বের করা হয়।

রতন কুমার সাহা বলেন, তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। মনিরার জ্ঞানও ফিরেছে। দীর্ঘদিন কাঁচিটি পেটের মধ্যে থাকায় পেটের নাড়ি পেঁচিয়ে যায় এবং একটি নাড়িতে পচন দেখা যায়। তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা না গেলে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

মনিরার ভাই মো. কাইয়ুম জানান, অস্ত্রোপচারের কয়েক দিন পরই মনিরাকে ফরিদুপরের নগরকান্দা উপজেলার পৈলানপট্টি গ্রামে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর তিনি পেটের ব্যথা অনুভব করেন। একপর্যায়ে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হন। পরে মনিরার পেটের বাচ্চা নষ্ট হলে তাঁকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্বামী। এরপর বিভিন্ন পল্লিচিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু তাঁর পেটের ব্যথা কমেনি।

ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে প্রায় দুই বছর চেপে রাখেন পেটব্যথা। দুই দিন আগে তাঁর পেটে অসহনীয় ব্যথা উঠলে গত বুধবার মুকসুদপুরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। ওই ক্লিনিকে এক্স–রের মাধ্যমে চিকিৎসক দেখতে পান, মনিরার পেটে একটি কাঁচি রয়েছে। গতকাল শুক্রবার মনিরাকে ফরিদপুর নিয়ে আসা হয়। এখানে এসে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে আবার এক্স–রে করা হলে ওই একই প্রতিবেদন আসে।

মনিরার ভাই কাইয়ুম বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় গিয়েছিলাম গতকাল রাতে। থানার ওসি বলেছেন, আগে অস্ত্রোপচার করে রোগীর কাঁচি বের করাসহ রোগীর সুস্থতা ফিরে আসুক, এরপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’

Exit mobile version