বাড়ি এক্সক্লুসিভ ভয়ঙ্কর সাকার ফিশে আতঙ্ক বাড়ছে

ভয়ঙ্কর সাকার ফিশে আতঙ্ক বাড়ছে

3
ভয়ঙ্কর সাকার ফিশে আতঙ্ক বাড়ছে

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) জলাশয়গুলোতে সম্প্রতি আতঙ্কের আরেক নাম সাকার ফিশ। দ্রুত বংশ বিস্তারকারী এই ক্ষতিকর মাছটি এখন হরহামেশাই দেখা মিলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোতে। তবে অ্যাকুরিয়ামে চাষযোগ্য বিদেশি প্রজাতির এই ক্ষতিকর মাছটি কীভাবে জলাশয়গুলোতে এসেছে সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য দিতে পারছে না কেউ।

মাছটির প্রকৃত নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। তবে ‘সাকার ফিশ’ নামেই এটি বেশি পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকোসটোমাস। সাকার ফিশ জলজ পোকামাকড় ও শেওলার পাশাপাশি ছোট মাছ এবং মাছের পোনা খেয়ে থাকে। তাছাড়া সাকার ফিশের পাখা খুব ধারালো।

অতিদূষণের ফলে শুষ্ক মৌসুমে বুড়িগঙ্গা নদীতে কোনো মাছের অস্তিত্ব না থাকলেও বৃষ্টি বাড়লে শিং, মাগুরসহ দেশীয় প্রজাতির অল্পসংখ্যক মাছ জেলেদের জালে উঠে আসে। সম্প্রতি এই নদীতে সাকার মাছের আধিক্য দেখা গেছে, যা খাওয়া যায় না, সারা গায়ে কাঁটায় ভরপুর। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন জেলেরা। 

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বুড়িগঙ্গায় মাছ শিকার করছেন লাল মিয়া নামে এক জেলে। থাকেন কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জে। তিনি বলেন, কোত্থেকে আইল অদ্ভুত এই চগবগে (সাকার ফিশ) মাছ, ভেবে কূলকিনারা করতে পারি না। সারাক্ষণ পানিতে এই মাছ কিলবিল করছে। এই মাছ তো কেউ খায়ও না।সেদিন দুপুরে বুড়িগঙ্গার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের পন্টুনের পেছনের অংশজুড়ে দেখা গেল শত শত সাকার মাছ। দূষিত বুড়িগঙ্গায় যেখানে মাছের দেখা মিলত না, এখন সাকারে সয়লাব।

এই মাছের পিঠ বড় ও ধারালো পাখনায় আবৃত। দুই পাশে আছে একই রকমের দুটি পাখনা। এর দাঁতও বেশ ধারালো। যেসব পানিতে দূষণের কারণে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে, সেখানে অন্য মাছ বাঁচতে পারে না, তবে এই মাছ পারে। পানি ছাড়াও মাছটি ২৪ ঘণ্টা দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে।

লড়াই করার সময় ধারালো পাখার আঘাতে সহজেই অন্য মাছের দেহে ক্ষত তৈরি হয় এবং পরবর্তীতে পচন ধরে সেগুলো মারা যায়। সাকার ফিশ রাক্ষুসে প্রজাতির না হলেও প্রচুর পরিমাণে খাবার ভক্ষণ করে। এতে খাদ্যের যোগান নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা হয় অন্য মাছের সঙ্গে। বেশিরভাগ সময়ই দেশীয় প্রজাতির মাছ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে না।

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, সাকার ফিশ দেশের বিভিন্ন জেলার নদ–নদীতে পাওয়া যাচ্ছিল, সে খবরটি আমাদের জানা। খুব শিগগির বুড়িগঙ্গা থেকে সাকার ফিশের নমুনা সংগ্রহ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এত দ্রুত কীভাবে সেখানে এরা বংশবিস্তার করল, সেই বিষয়ে গবেষণা করে দেখা হবে।

জানা যায়, সাকার ফিশের প্রভাবে মায়ানমার ও আরব আমিরাতের মৎস্য চাষিরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশে কয়েক বছর আগে উপকূলীয় জেলাগুলোতে প্রথম এই মাছের দেখা মিলে। তবে এখন সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুরের মতো জায়গা যা উপকূল থেকে অনেক দূরে, সেখানেও দেখা মিলছে এই মাছের।

বাকৃবির জলাশয়গুলোতে এখন প্রায়ই ধরা পড়ছে এই মাছ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈশা খাঁ হল-সংলগ্ন লেক ও পাশের জলাশয়ে অনেক বেশি দেখা মিলছে এই মাছের। এর ব্যাপক বিস্তার ঘটলে দেশীয় প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মৎস্য গবেষকরা।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদ জানান, সাকার মাউথ ক্যাটফিশ সহজেই নতুন পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজিত হয়ে দ্রুত বংশ বিস্তার করতে সক্ষম। অনেকে শুরুর দিকে অ্যাকুরিয়াম ফিশ হিসেবে পালন করলেও পরবর্তীতে মাছটি বড় হয়ে গেলে তখন পুকুর বা ডোবায় ছেড়ে দেয়।

তিনি আরও জানান, মাছটি নতুন পরিবেশে খাপ খেয়ে বংশ বিস্তার শুরু করে। মাছটি খেতে সুস্বাদু না হওয়ায় সাধারণত কেউ মাছটি খায় না এবং বাজারেও মাছটির কোনো চাহিদা নেই। মাছটি ভক্ষণে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কি না, সে বিষয়ে এখনও কোনো গবেষণা হয়নি।

তিনি জানান, এই মাছটি একবার কোনো জলাশয়ে ঢুকে পড়লে এর বিস্তার রোধ করা খুব কঠিন। চাষের পুকুরে এই মাছ ঢুকে পড়লে অন্য মাছের সঙ্গে খাবার ও বাসস্থান নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু করে। এতে করে বাইরে থেকে পর্যাপ্ত খাবার প্রদান করলেও কাঙ্ক্ষিত মাছের উৎপাদন পাওয়া যায় না। এভাবে মাছ চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েন।