বাড়ি এক্সক্লুসিভ জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাবিষয়ক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত

জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাবিষয়ক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত

জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাবিষয়ক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত

রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার বিষয়ে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উপস্থাপিত একটি প্রস্তাব আজ বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। ২০১৭ সালে সংকট শুরুর পর এই প্রথম রোহিঙ্গাবিষয়ক কোনো প্রস্তাব জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হলো।নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে।

এবারের প্রস্তাবে ১০৭টি দেশ সহপৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছে, যা ২০১৭ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ইইউ, ওআইসি ছাড়াও প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেশ প্রস্তাবে সমর্থন জুগিয়েছে; সহপৃষ্ঠপোষকতা করেছে।

নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, মানবিক সহায়তা প্রদান, করোনার জাতীয় টিকা কর্মসূচিতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ যে উদারতা-মানবিকতা প্রদর্শন করেছে, প্রস্তাবটিতে এর ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।

প্রস্তাবে প্রাথমিকভাবে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতির পাশাপাশি গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপটের মতো বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে।

রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা, বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বাধ্যবাধকতাগুলো পূরণ করা, মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতসহ সংস্থার সব মানবাধিকার ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করতে এবারের প্রস্তাবে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।চলমান বিচার ও দায়বদ্ধতা নিরূপণের প্রক্রিয়ার ওপর প্রস্তাবটিতে সজাগ দৃষ্টি বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে।

প্রস্তাবটিতে কক্সবাজারের অত্যন্ত জনাকীর্ণ আশ্রয়শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তর, সেখানে অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার যে প্রচেষ্টা-বিনিয়োগ করেছে, তার স্বীকৃতিও দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মধ্যকার সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরকে স্বাগত জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবে মিয়ানমারে নবনিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতকে স্বাগত জানানো হয়েছে। মিয়ানমারকে সম্পৃক্ত করে একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের কথা প্রস্তাবে বলা হয়েছে।জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা প্রস্তাব গ্রহণের বক্তৃতায় বলেন, ‘জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাবিষয়ক প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়াটা এই সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন।’ 

রাবাব ফাতিমা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক বিবেচনায় ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, রোহিঙ্গাদের স্বপ্রণোদিত, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিয়ানমার ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যাবাসনের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় রোহিঙ্গাদের হতাশা ক্রমে তীব্র হচ্ছে, যা এ অঞ্চলে নানা ধরনের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।

রাবাব ফাতিমা আরও বলেন, ‘এবারের প্রস্তাবটি নিজভূমি মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে, যা দীর্ঘস্থায়ী এই সমস্যার টেকসই সমাধানে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একটি শক্তিশালী ম্যান্ডেট নিয়ে এবারের প্রস্তাব গৃহীত হলো, যা রোহিঙ্গাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করবে। যে জন্য তারা পথ চেয়ে বসে আছে।’

Exit mobile version