বাড়ি অপরাধ মাদক মামলায় পলাতক লেডি বাইকার রিয়া রায়

মাদক মামলায় পলাতক লেডি বাইকার রিয়া রায়

0
মাদক মামলায় পলাতক লেডি বাইকার রিয়া রায়

লেডি বাইকার রিয়াকে নিয়ে নানা জল্পনা সিলেটে। সবচেয়ে আপডেট কয়েক লাখ টাকা দামের ‘আর ওয়ান ফাইভ’ মডেলের মোটরসাইকেল চালায় সে। স্মার্ট, সুদর্শন তরুণী। ওয়েব দুনিয়ায় আছে সুখ্যাতি। ইউটিউব, ফেসবুকের পরিচিত মুখ রিয়া। সিলেটের রাস্তায় নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় চালায় মোটরসাইকেল সে। এয়ারপোর্ট সড়কে তাকে দেখা যায় প্রতিদিনই। এ কারণে উঠতি বয়সী ছেলেরা ছাড়াও অনেকের নজর কেড়েছে রিয়া।

গত রোববার রাতে রিয়া এয়ারপোর্ট এলাকা দিয়ে সিলেট নগরে ফিরছিল। সঙ্গে ছিল তার পুরুষ বন্ধু আরমান সামী। তাদের সঙ্গে মাদক রয়েছে বলে পুলিশের কাছে খবর আসে। এই খবরের প্রেক্ষিতে দায়িত্বে থাকা এয়ারপোর্ট থানার পুলিশের এসআই গৌতম চন্দ্র দাশ মোটরসাইকেল থামাতে সিগন্যাল দেন। প্রথমে রিয়া ও তার বয়ফ্রেন্ড পুলিশের সিগন্যাল মানেনি। পরে কিছু দূর গিয়ে দাঁড়ালে রিয়া মোটরসাইকেল থেকে নেমে দ্রুত চলে যায়। পুলিশ এ সময় মোটরসাইকেল ও আরমান সামীকে তল্লাশি করে পানির বোতলে রাখা বিশেষ মদ, ইয়াবা ট্যাবলেট ১০ পিস ও দুই পুরিয়া গাজা উদ্ধার করে।

ওই সময় পুলিশ সঙ্গে থাকা তরুণী সম্পর্কে সামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সামী জানায়, সঙ্গে থাকা তরুণী তার  গার্ল ফ্রেন্ড। নাম রিয়া রায়। সে সিলেটে লেডি বাইকার হিসেবেও পরিচিত বলে সামী জানায়। এ ঘটনায় পুলিশ গ্রেপ্তার হওয়া সামী ও পলাতক থাকা রিয়াকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে। আর এই মামলা দায়েরের পর থেকে পলাতক রয়েছে রিয়া।

এক সপ্তাহ ধরে পুলিশ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজলেও পাচ্ছে না। তবে রিয়ার বয়ফ্রেন্ড সামী গ্রেপ্তার হয়ে কারান্তরীণ রয়েছে। রিয়ার মাদক জগতের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর তার কর্মকাণ্ড নিয়ে তোলপাড় চলছে। তাকে নিয়ে নানা জল্পনা হচ্ছে নগরীর কুমারপাড়া ঝরনার পাড় এলাকায়ও। রিয়া রায়, বয়স ২২ কিংবা ২৩ বছর। মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের ষোলঘর এলাকায়। গত এক বছর ধরে বসবাস করছে নগরীর ঝরনারপাড় মন্দিরগলির ৬২-এ নম্বর বাসায়। ওই বাসার তিন তলার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বান্ধবীকে নিয়ে বসবাস করছে। 

রাতের বেলা তার সঙ্গে একাধিক বয়ফ্রেন্ড আসতো। তারা রিয়াকে নিয়ে হই-হুল্লোড় করে বাসার সামনে পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যেতো। কয়েক মাস আগের ঘটনা। হঠাৎ পাড়ার ভেতরে এসে রিয়ার বাসার সামনে জটলা বাঁধায় নগরীর দক্ষিণ সুরমা থেকে কয়েকজন যুবক। তারা ৪-৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে রিয়ার বাসার সামনে এসে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছিল। এ সময় এলাকার লোকজন এগিয়ে আসেন। তারা এসে বিষয় কী জানতে চাইলে; ওই যুবকরা জানায়, রিয়া মাতাল অবস্থায় তাদের একজনের বাড়িতে গিয়ে গালিগালাজ করে এসেছে। এ কারণে তারা রিয়াকে উঠিয়ে নিতে চলে এসেছে। পরে এলাকার মানুষের হস্তক্ষেপে ওই যুবকরা শান্ত হয় এবং চলেও যায়।

রিয়া প্রতিদিন সকালে নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে বাসা থেকে বের হতো। ফিরতো বিকালে। প্রায় সময় বয়ফ্রেন্ডরা তার সঙ্গে বাসার গেইট পর্যন্ত আসতো। একেক দিন একেক জন্য বয়ফ্রেন্ড আসে। রিয়ার সঙ্গে বাসার গেইট পর্যন্ত অপরিচিত যুবককে যাতায়াত ভালো চোখে দেখেননি এলাকার মানুষ। আবার সন্ধ্যার দিকে নিজেই মোটরসাইকেল নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যেতো রিয়া। ফিরতো রাত ১১টা কিংবা ১২টার দিকে। এটাই ছিল তার প্রতিদিনের রুটিন।

বিভিন্ন ঘটনার পর এলাকার যুবকরা বাসার মালিকের সঙ্গে কয়েক বার যোগাযোগ করেন এবং এলাকার পরিবেশ রক্ষার জন্য রিয়া ও তার বান্ধবীকে বিদায় করে দেয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু বাসার মালিক এলাকার যুবকদের কথায় কর্ণপাত করেননি। বরং এলাকায় আরও বেশি বেসামাল হয়ে উঠেছিল রিয়া রায়। গেল এক মাস ধরে প্রতি রাতেই পুরুষ বন্ধুদের নিয়ে পাড়ার ভেতরে আসে রিয়া। প্রায় দিনই সে মাতাল অবস্থায় থাকতো। এলাকার মানুষ ভয়ে রিয়ার এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেন না। আর বাসার মালিকের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছিলো না।

এয়ারপোর্ট এলাকার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রিয়া তাদের কাছে পরিচিত মুখ। সে প্রতিদিনই এয়ারপোর্ট এলাকায় মোটরবাইক নিয়ে আসে। বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আড্ডা দেয়। কখনো কখনো তারা এয়ারপোর্টের ভেতরে আবার কখনো কখনো তারা বাইশটিলা এলাকায় যেতো। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত বন্ধুদের নিয়ে এয়ারপোর্ট রোড এলাকায় রিয়ার বিচরণ ছিল।

তাদের বিরুদ্ধে মাদক সেবনেরও অভিযোগ রয়েছে। চা বাগান এলাকার নিরিবিলি জায়গায় সন্ধ্যার পর তারা ঘুরাফেরা করতো। নানা সময় বেপরোয়া কর্মকাণ্ড চোখে পড়েছে এলাকার মানুষের। পুলিশ জানিয়েছে, রিয়া ও তার বন্ধুদের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও বিক্রির অভিযোগ তাদের কাছে এসেছে অনেক আগেই। সামী গ্রেপ্তারের পর তাদের বন্ধুদেরও আর এয়ারপোর্ট এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।

সামীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। স্থানীয় ঝরনার পাড় এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, মামলা দায়েরের পর রিয়ার বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে গেছে। কিন্তু রিয়াকে বাসায় পায়নি। সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার ওসি খান মুহাম্মদ মাইনুল জাকির মানবজমিনকে জানিয়েছেন, মাদক মামলা দায়ের করার পর থেকে পুলিশ রিয়ার খোঁজে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু রিয়ার কোনো খোঁজ মিলছে না। তিনি বলেন, রিয়ার বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। রিয়া এবং তার মাদক চক্র সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।