এক্সক্লুসিভবাংলাদেশময়মনসিংহ

ভালোবাসার টানে বাংলাদেশে আসা ফিলিপিনো নারী এখন ইউপি মেম্বার

ভালোবাসার টানে নিজ দেশ-ধর্ম ছেড়ে ১০ বছর আগে ছুটে আসেন বাংলাদেশে। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন ময়মনসিংহের মো. জুলহাস উদ্দিনকে। এবার ফুলবাড়িয়ার ১১নং রাধাকানাই ইউনিয়ন থেকে ইউপি নির্বাচনে ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য পদে নির্বাচিত হলেন জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা ওরফে জেসমিন আক্তার।

দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী আসনে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন—জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা ওরফে জেসমিন আক্তার জুলহাস নামের এই নারী। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ১১ নম্বর রাধাকানাই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনে সদস্য পদে মাইক প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি।

রাধাকাইন ইউনিয়নের কোদালি পাড় গ্রামের জুলহাসের স্ত্রী ফিলিপাইনের মেয়ে (বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিক) জেসমিন। সংরক্ষিত ওয়ার্ডে তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাতে মাইক প্রতীক নিয়ে ৪ হাজার ৪৯৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেয়েছেন ১ হাজার ৮৩৭ ভোট।

জানা গেছে, ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে একটি কোম্পানিতে চাকরি করতে সিঙ্গাপুর পাড়ি জমান ফুলবাড়িয়ার রাধাকানাই ইউনিয়নের দবরদস্তা গ্রামের আবদুস সামাদ মণ্ডলের ছেলে জুলহাস মিয়া। সেখানে কিছুদিন চাকরি করার পর একই কোম্পানিতে চাকরিরত ফিলিপাইনের নাগরিক জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকার সঙ্গে পরিচয় হয়। দীর্ঘদিনের প্রবাসজীবনে তাদের মধ্যে সেই পরিচয় ভালোবাসায় গড়ায়। একপর্যায়ে চাকরি ছেড়ে জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা তার নিজ দেশ ফিলিপাইনে চলে যান। অন্যদিকে, জুলহাস মিয়াও বাংলাদেশে চলে আসেন। কিন্তু তারা প্রেমের সম্পর্ক ঠিক রাখাতে মুঠোফোনে নিয়মিত যোগাযোগ চালিয়ে যান। 

জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা জুলহাস মিয়াকে বিয়ে করবেন— এমন শর্তে ফিলিপাইনে আসতে বলেন প্রেমিক জুলহাসকে। জুলহাস মিয়া প্রেমের টানে ফিলিপাইনে গিয়ে জিনের পারিবারিক সম্মতিক্রমে বিয়ের সব আয়োজন ঠিক করেন। বিয়ের পূর্বমুহূর্তে সংশ্লিষ্ট বিয়ের আয়োজকেরা বলেন, দুজন দুই ধর্মের, সংসারজীবনে অশান্তি তৈরি হতে পারে। তাই দুজনের যেকোনো একজনকে তার ধর্ম ছেড়ে আসতে হবে।

পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন জিন ক্যাটামিন পেট্রিয়াকা। বিয়ের পর তার নতুন নাম রাখা হয় জেসমিন আক্তার জুলহাস। বাংলাদেশে ফিরে আসার পর এ দেশের নাগরিকত্ব পান তিনি। ২০১০ সালের দিকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। বিয়ের পর থেকে ধর্মীয় সব ধরনের নিয়মকানুন মেনে দিন যাপন করছেন জেসমিন। বাংলাদেশে প্রায় ১১ বছর হয়ে গেছে তার সংসারের বয়স। জাহিদুল ইসলাম ও ফারিয়া আক্তার নামের দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে এ দম্পতির।

এখন গ্রামে বের হলেই শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও জেসমিন আক্তারকে দেখার জন্য আসছেন। তার মুখে ইংরেজি কথা শুনে অনেকেই আনন্দ পাচ্ছেন। ইতিমধ্যে কিছু কিছু বাংলা শব্দও বলতে শিখে গেছেন জেসমিন আক্তার। এ ছাড়া তার স্বামী জুলহাস মিয়া দোভাষী হিসেবে সাধারণ মানুষের কথা ইংরেজিতে অনুবাদ করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন জেসমিন আক্তারকে।

নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও ভোটারদের কাছে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জয়ী হওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন— এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেসমিন আক্তার জুলহাস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার স্বামী জুলহাসকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসি। তার জন্যই নিজের দেশ ও মা–বাবাকে ছেড়ে বাংলাদেশ ছুটে আসা। সে আমাকে এ দেশের সবুজ প্রকৃতি ও মানুষকে চিনিয়েছে। আমি ধন্যবাদ জানাই সরকারকে। কোনোরূপ জটিলতা ছাড়াই এ দেশের সরকার আমাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়েছে। এ দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়।’

জুলহাস মিয়া বলেন, জনমতের কারণে এলাকাবাসীর অনুরোধেই রাধাকানাই ইউনিয়নের ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনে সদস্য প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য উদ্যোগ নিই। নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর সবার কাছ থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছিলাম। সবাই চাচ্ছে সে প্রতিনিধি হয়ে আসুক। ঠিক নির্বাচনের দিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ আমার স্ত্রীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছে। আমার পক্ষ থেকে ভোটারদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

প্রতিবেশীরা বলেন, তিনি নিজের দেশ, পরিবার ছেড়ে এখানে এসে আমাদেরকে আপন করে নিয়েছেন। আমরাও তাকে অনেক পছন্দ করি। সেজন্যই তাকে আমরা ভোট দিয়ে পাস করিয়েছি। তিনি এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন।

Back to top button