সিনেমার শুটিংয়ের উদ্দেশ্যে রাশিয়ার মহাকাশযাত্রা

মহাশূন্য প্রতিযোগিতায় ১৯৬১ সালে এগিয়ে যায় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। কিন্তু এরপর থেকে মহাকাশ ভ্রমণে নেই উল্লেখ করার মতো তাদের কোনো অর্জন। সোভিয়েত ইউনিয়নের আগেই চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৬৯ সালে প্রথম চাঁদে পা রাখেন নীল আর্মস্ট্রং। মহাকাশে নিজেদের স্টেশন বানিয়ে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গেছে চীনও। রাশিয়া এখনো প্রথম অর্জন নিয়েই বসে থাকবে—এটা কি করে হয়? তাই প্রতিযোগিতায় গতকাল নতুন এক মাইলফলক যুক্ত করেছে রাশিয়া। এবারও লড়াইটা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেই। কী সেই লড়াই?

গত বছরই মহাকাশে সিনেমার শুটিং করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। মিশন ইমপসিবল তারকা টম ক্রুজকে নিয়ে  হবে সেই শুটিং। এতে সহায়তা করবে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স। কিন্তু শুটিংয়ের জন্য মহাকাশযাত্রার তারিখ ঠিক করা হয়নি এখনো।

এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে নতুন মাইলফলক গড়েছে রাশিয়া। গতকাল প্রথমবার মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন দেশটির একজন নির্মাতা এবং অভিনেত্রী। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ১২ দিন সিনেমার শুটিং করবেন তাঁরা। বাংলাদেশ সময় গতকাল বেলা ৩টায় বাইকোনার কসমোড্রোম থেকে সুয়োজের মহাকাশযানে করে শুরু হয় মহাকাশযাত্রা। ‘সুয়োজ এমএস-১৯’ নামের এ মিশন ধূলিসাৎ করে দেয় মিশন ইমপসিবল তারকাকে নিয়ে গড়া যুক্তরাষ্ট্রের স্বপ্ন।

শুটিং করতে মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে এরই মধ্যে রওনা দিয়েছেন নির্মাতা ক্লিম শিপেনকো (৩৮) এবং অভিনেত্রী ইউলিয়া পেরেসিল্ড (৩৭)। কিন্তু তাঁদের তো মহাকাশে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। যাবেন কি করে? তাই সঙ্গে গেছেন তিনবার লম্বা সময় ধরে মহাকাশে যাত্রা করা অভিজ্ঞ নভোচারী অ্যান্টন কাপলেরভ। তিনি কয়েক মাস সেখানে থাকলেও ১৭ অক্টোবর ফিরে আসবেন সিনেমার দুই কলাকুশলী। এ তথ্য জানিয়েছে রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমস।

বিজ্ঞানভিত্তিক সাময়িকী ‘স্পেস’ জানিয়েছে, সব প্রস্তুতি নিয়েই তাঁরা মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছেন। এতক্ষণে হয়তো শুরু হয়ে গেছে সিনেমার শুটিং। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়া যে মাইলফলকে পৌঁছে গেছে, সেটি তাদের পরবর্তী পদক্ষেপেও বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে গবেষণা সংস্থা রসকসমস।

যে সিনেমার জন্য এত আয়োজন তার গল্পটা হলো—মহাকাশ স্টেশনে একজন নভোচারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যেকোনো সময় মারা যেতে পারেন। দ্রুত তাঁর চিকিৎসা প্রয়োজন। এ অবস্থায় পাঠানো হচ্ছে একজন চিকিৎসক। তাঁর সেই অভিযান এবং মহাকাশ স্টেশনে অবস্থানের সময়টাই দেখানো হবে ‘দ্য চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামের সিনেমায়।

সিনেমার নাম দ্য চ্যালেঞ্জ। আর বাস্তবেও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে শিপেনকো ও পেরেশিল্ডকে। কেননা, সেখানে থাকছেন না অন্য কলাকুশলীরা। নির্মাতার কাজের অন্যতম সাহায্যকারী ক্যামেরাপারসন এবং প্রোডাকশন হাউসের লাইট নিয়ে কাজ করা কর্মীরা। কিন্তু নির্মাতা ক্লিম শিপেনকোতে কাজ করতে হবে একা। ক্যামেরা চালাতে হবে তাঁকেই। সঙ্গে আলোর (লাইট) ব্যবস্থাও করতে হবে। কিছুটা বিপাকে পড়তে পারেন অভিনেত্রী ইউলিয়া পেরেসিল্ডও। কেননা, সেখানে থাকছেন না কোনো মেকআপ আর্টিস্ট। ফলে নিজেই এ কাজ করতে হবে।

Exit mobile version