বাড়ি অপরাধ কেউ কেউ হারানো সাম্রাজ্য আবার দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে

কেউ কেউ হারানো সাম্রাজ্য আবার দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে

2
কেউ কেউ হারানো সাম্রাজ্য আবার দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে

বহুল আলোচিত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের দুই বছর পরের চিত্র এখন এমনই। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তৎকালীন যুবলীগ নেতা খালেদকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে অভিযানটি শুরু হয়। ক্লাবপাড়া ঘিরে চলা ওই অভিযানে একের পর এক ‘রাঘববোয়াল’ গ্রেপ্তার হন। অনেকে গা-ঢাকা দেন। অবশ্য পলাতক অনেকে এখন আবার ফিরে এসেছেন। কেউ কেউ জামিনে বেরিয়ে পুরোনো তৎপরতায় জড়িত হয়েছেন। অনেকে অনলাইনে ক্যাসিনো ও জুয়ার কারবার খুলে বসেছেন। তা ছাড়া এখন ক্লাবপাড়া ঘিরে নজরদারিও তেমন নেই।

দুই বছর আগে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ হারানো সাম্রাজ্য আবার দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। পলাতক জীবন ছেড়ে অনেকে প্রকাশ্যে এসেছেন। আবার অনেকে শিষ্যদের ব্যবহার করে এলাকায় নতুন করে ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠায় মরিয়া। এরই মধ্যে খিলগাঁও এলাকায় সাবেক যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ শিষ্যরা দখল নেওয়ার সব আয়োজন চূড়ান্ত করেছে। তারা সাইফুল ইসলাম নামে এক যুবলীগ নেতার ওপর সম্প্রতি গুলি চালিয়েছে।

ক্যাসিনোকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার মধ্যে ১৯টির অভিযোগপত্র দাখিল করেছে র‌্যাব ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। আরও তিনটি মামলার তদন্ত চলছে। যুবলীগের বহিস্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও খালেদের বিরুদ্ধে দায়ের মানি লন্ডারিং আইনের দুটি মামলার তদন্ত তিনটি দেশ থেকে পাওয়া প্রতিবেদনের জন্য আটকে আছে।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, ক্যাসিনোর ঘটনায় সিআইডি এরই মধ্যে ১০টি মামলার চার্জশিট দিয়েছে। আরও একটি মামলায় তদন্ত শেষ পর্যায়ে। সেই মামলায় দুই সহোদর এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়া আসামি হচ্ছেন। আর সম্রাট ও খালেদের অর্থ পাচারের ব্যাপারে জানতে বিদেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর দলের যৌথ সভায় দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেন। এরপর দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভায় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। ওই সভায় যুবলীগের দুই নেতার সমালোচনা করা হয়। এর পাঁচ দিনের মাথায় ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। ওই দিন মতিঝিলের চারটি ও গুলশানের একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালানো হয়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, এরই মধ্যে খিলগাঁও এলাকায় বিশ্বস্ত শিষ্যদের ব্যবহার করে সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বহিস্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ। তার হয়ে এলাকার একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করছেন ‘পোলট্রি রিপন’। ১৬ মে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খিলগাঁও ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে (৩৫) গুলি করেছে পোলট্রি রিপনের লোকজন। রিপনের সাঙ্গোপাঙ্গদের মধ্যে আছেন সুমন, কবীর, ডালিম, মামুন, কচি, রাসেল, অনিকসহ ১০ জন। খালেদ গ্রেপ্তারের পর রিপন ও তার বাহিনীর কেউ এলাকায় ছিলেন না। বছর খানেক পর তারা আবার খিলগাঁও ফিরে চাঁদাবাজি শুরু করেছেন।

যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিস্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের জুয়ার আসরের ইজারাদার আলী আহমেদ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এসএম রবিউল ইসলামসহ আরও অনেকে এখন প্রকাশ্যে। কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ ও মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া জামিনে আছেন।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাবেক দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমানসহ আরও অনেকের ব্যাংক হিসাব তলব করে। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তিন সংসদ সদস্যসহ ২৩ জনের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম বলেন, ক্যাসিনো কাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার কেউ আবার কৌশলে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে কিনা তার ওপর গোয়েন্দা নজর রয়েছে। নতুন অন্য কোনো গ্রুপও যাতে বেআইনি কোনো কর্মকাণ্ডে জড়াতে না পারে, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে। কোনো এলাকায় কেউ গোপনে টুকটাক তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছে, এমন খবর রয়েছে।

More News