বাড়ি বাংলাদেশ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের ডাক দেবে বিএনপি

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের ডাক দেবে বিএনপি

1
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের ডাক দেবে বিএনপি

এককভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের ডাক দেবে বিএনপি। এ আন্দোলনে দেশের বিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট নাগরিক, এমনকি গণতন্ত্রমনা সমালোচকদেরও পাশে চাইবে তারা। এই নিয়ে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় কর্মপন্থা ঠিক করতে ১০ থেকে ১২ দফার একটি রূপরেখার খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। 

তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না, আর না নিলে আন্দোলনের কৌশল কী হবে, তা নিয়ে দলটির নীতিনির্ধারকেরা চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। এ ছাড়া দুই রাজনৈতিক জোটের (২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে, সে বিষয়টিও এখনো ঠিক হয়নি।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন এবং আন্দোলন প্রশ্নে একটি রূপরেখা তৈরির কাজ করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মাঠের চাহিদা অনুযায়ী এটি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্যই দলীয় নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামত নেওয়া হচ্ছে।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে অথবা আগামী মাসে বড় পরিসরে একটি সংবাদ সম্মেলন করতে পারে বিএনপি। এতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি এবং দলের অবস্থান তুলে ধরে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হতে পারে।

১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে টানা তিন দিনের বৈঠকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সবাই বর্তমান সরকার এবং বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তিন দিনের বৈঠকে মোট ২৪৯ জন নেতা অংশ নেন, বক্তব্য দেন ১১২ জন।

বৈঠকের সময় ছিল সাড়ে ১৬ ঘণ্টা। সবার বক্তব্যের মূল বিষয় হচ্ছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এবং বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় ভোটে অংশ নিলে ফলাফল ২০১৪ সাল ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের মতোই হবে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যেতে হলে বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় (দলীয় সরকারের অধীনে নয়) পরিবর্তন আনতে হবে। আর সেটি আদায় করার জন্য আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প তাঁরা দেখছেন না।

জানা গেছে, তিন দিনের ধারাবাহিক ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নেতারা দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ দলের সাংগঠনিক নানা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। এর মধ্যে নেতারা ১২টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। তা হচ্ছে- দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ‘নেতৃত্ব ধার না করে’ বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে তোলা, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়া।

সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে একই প্ল্যাটফর্মে আনা, পরিকল্পনামাফিক আন্দোলনের ছক কষা, দীর্ঘ নয় স্বল্প সময়ের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা, বিভেদ ভুলে দলে আত্মিক বন্ধন সুদৃঢ় করা, কমিটি গঠনে অনৈতিক লেনদেন বন্ধ করা, আন্দোলনমুখী নেতৃত্ব বাছাই করা, সংগঠনকে শক্তিশালী করা, বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়, বিশ্ব পরিস্থিতি বুঝে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি এবং দলের অবস্থান পরিষ্কার করা। এর বাইরেও দলের স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির শূন্যপদ পূরণের পক্ষে মতামত দিয়েছেন নেতারা। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত পাওয়া গেছে।

দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে এটি তারেক রহমানের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক।বিএনপি সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১০ থেকে ১২ দফার একটি রূপরেখার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সেটি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ও মতামত নেওয়া হচ্ছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে দলে নানা মত ছিল। এর মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু তিন দিনের বৈঠকে এমন একজন নেতাও পাওয়া যায়নি, যিনি নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে অথবা মাঝামাঝি কোনো মত দিয়েছেন। একবাক্যে সবাই বলেছেন, এ সরকারের অধীন আর কোনো নির্বাচন নয়।

আন্দোলন শুরুর আগে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনগুলো গোছানোর পরামর্শ এসেছে ধারাবাহিক বৈঠকে। জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের পাশাপাশি সব অঙ্গসংগঠন আন্দোলনমুখী নেতৃত্বে পুনর্গঠনের দাবি এসেছে। বিশেষ করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল ও ছাত্রদলের মতো অঙ্গসংগঠনগুলো দ্রুত কমিটি গঠনের জন্য নেতারা তাগাদা দেন বলে জানা গেছে। বিএনপির অঙ্গসংগঠন ৯টি ও সহযোগী সংগঠন দুটি। অঙ্গসংগঠনের সবকটি কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। ওলামা দল, তাঁতী দল ও মৎস্যজীবী দলে আহ্বায়ক কমিটি করে যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল তারও মেয়াদ চলে গেছে।

দুই সহযোগী সংগঠনের মধ্যে শ্রমিক দলের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ এবং ছাত্রদলের কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ ১৮ সেপ্টেম্বর। তারা তাদের নির্ধারিত মেয়াদেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। জানা গেছে, নির্বাচিত নেতৃত্বেও ছাত্রদল নিয়ে হতাশ বিএনপির হাইকমান্ড।

More News