বাড়ি আইন-আদালত আজও আদালতে পরীমনির হাতে ‘অশ্লীল’ বার্তা

আজও আদালতে পরীমনির হাতে ‘অশ্লীল’ বার্তা

2
আজও আদালতে পরীমনির হাতে ‘অশ্লীল বার্তা

আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে সবার উদ্দেশে হাত নেড়ে নতুন বার্তা দিয়েছেন ঢাকা সিনেমার আলোচিত নায়িকা পরীমনি। মেহেদি দিয়ে ডান হাতে লেখা ‘…মি মোর’ এর মাধ্যমে আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন তা খোলাসাও করেছেন এই অভিনেত্রী। তবে তার এই বার্তাটি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। কারণ, পরীমনি জানিয়েছেন- মেহেদি দিয়ে তালুতে ‘মিডল ফিঙ্গার’ এঁকে এবং ‘মি মোর’ দ্বারা বুঝিয়েছেন ‘ফাক (গালি) মি মোর’।

তার এই বার্তাটি চরম বিব্রতকর বলে সমালোচনা করছেন দেশের সচেতন নাগরিক ও অভিভাবকরা। কারণ পরিবারের শিশু-কিশোররা এই আচরণ দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। এ ছাড়া এটি ‘অশ্লীলতা’ হিসেবে প্রচলিত আইনে অপরাধ হিসেবেও গণ্য হতে পারে বলে অভিমত বিজ্ঞজনদের।

বিজ্ঞজনরা বলছেন, দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন শিল্পীর এমন আচরণে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলতে পারে শিশু-কিশোররা। তাই সেলিব্রেটি হিসেবে পরীমনিকে সতর্ক করে দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শন করতে হবে।এ ছাড়া পরীমনির এই বার্তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে মতামত দিয়েছেন বিজ্ঞ আইনজীবীরা। দেশের প্রচলিত পর্নোগ্রাফি আইনের সংজ্ঞায় একে অপরাধ হিসেবে গণ্য করছেন তারা।

দেশের সচেতন নাগরিক ও অভিভাবকরা বলছেন, শিশু-কিশোরদের গণ্ডি ছোট থাকে। চোখের সামনে তারা যা দেখে অনায়াসে তা আয়ত্ত করে ফেলে। টেলিভিশন, কম্পিউটার ও মোবাইলে এসব আলোচিত ঘটনার ছবি বারবার ভেসে উঠছে। সেগুলো তারা দেখছে। এর ফলে বিব্রতকর পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে। কারণ হাতে মেহেদি দিয়ে লেখা ‘মি মোর’ ও ‘মিডল ফিঙ্গার’ এর ছবি দ্বারা কী বোঝাচ্ছে তা তাদের মনে প্রশ্ন তৈরি করছে। পরিবারের বড়দের কাছে এর অর্থ জানতে চাইলেও তাদের বোঝানো যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক বার অ্যাসোসিয়েশন প্রদত্ত ‘আইবিএ প্রোবোনো অ্যাওয়ার্ড, ২০২০’ অর্জনকারী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান। তিনি বলেন, ‘পর্নোগ্রাফি আইন-২০১২ সালের ২ এর ‘‘গ’’ উপধারায় ‘‘পর্নোগ্রাফি’’ এর সজ্ঞায় বলা হয়েছে- যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোন অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যাহা চলচ্চিত্র, ভিডিও চিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোন উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যাহার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই।’

এই আইনজীবী বলেন, ‘এখানে নায়িকা পরীমনি পর্নোগ্রাফি আইনের ‘‘গ্রাফিকস বা অন্য কোন উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যাহার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই’’ সংজ্ঞামতে অপরাধ করেছেন বলে মনে করছি। তবে কেউ এ বিষয়ে থানায় কিংবা আদালতে অভিযোগ না করলে আইনের প্রয়োগ বিচার পর্যন্ত গড়াবে কেমন করে?

আইনজীবী ইশরাত হাসান আরও বলেন, ‘এ ধরণের অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে একই আইনের ৮ ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়েছে- কোন ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের মাধ্যমে গণউপদ্রব সৃষ্টি করিলে তিনি অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন এবং উক্তরূপ অপরাধের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ২ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। পর্নোগ্রাফি আইনের অপরাধসমূহ আমলযোগ্য এবং অ-জামিনযোগ্য অর্থাৎ জামিনযোগ্য নয়।’

বিজ্ঞ অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশি, আমাদের সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল কালচার আছে। বিপরীতে এই দেশে কিছু লোকজন এবং কিছু নায়ক নায়িকারা আছে, যারা আমাদের সুন্দর কালচারকে টোটাললি অবজ্ঞা করে চলছে। তারা আমাদের সমজাটাকে এমনভাবে দূষিত করছে, যে আমরা বাঙালি সমাজ, আমাদের সুন্দর ঐতিহ্য আছে, সেই জিনিসগুলো ভবিষ্যতে না রাখার জন্য তৎপরতা শুরু হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘উনি (পরীমনি) যে সাইনটা দেখিয়েছেন, সেটি অত্যন্ত অসন্মানজনক। কারণ একেকটি ফিঙ্গার দেখিয়ে, একেকটি মিনিং বোঝানো হয়। এরমধ্যে ‘‘মধ্যমা আঙ্গুল’’ অশ্লীল ইঙ্গিত দিতে ব্যবহার করা হয়। এটি বিদেশে বহুল ব্যবহৃত। অশ্লীলতা প্রকাশে এটির প্রদর্শন কোনোভাবেই কাম্য নয়। 

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি- ‘যে দেশে প্রকোশ্যে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে মিথ্যা অভিযোগ আনতে পারে, এবং সেই নারীর সম্পর্কে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয় না। এর কারণ হলো- ওই নারী যে কোনো সময় যে কারও বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযোগ করতে পারে।’

বিজ্ঞ অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু বলেন,পরীমনি একজন জনপ্রিয় নায়িকা, তিনি অশ্লীলতা প্রদর্শন করেছেন। তার বিরুদ্ধ আইনি পদক্ষেপের আবেদন জানাচ্ছি।’‘মিডল ফিঙ্গার’ এঁকে সেটি প্রদর্শন করা নিশ্চিত সামাজিকভাবে ঘৃণা ও অপরাধমূলক কাণ্ড। এমন আচরণে কেউ যদি ক্ষুব্ধ হয় এবং এটিকে ‘বেড ম্যাসেজ’ মনে করে। তাহলে ওই ক্ষুব্ধ ব্যক্তি চাইলে প্রদর্শনকারীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন।

পরীমনির হাতে প্রদর্শন করা সিম্বলের বিষয়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মিজান মালিক বলেন, ‘পরীমনি হাতে যা লিখেছেন বা এঁকেছেন, এটি সত্যিই একটা বিব্রতকর বিষয়। কোনো শিশু বা তরুণী বয়সী কেউ যদি তার অভিভাবককে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে সেটির উত্তর কি হবে তা আমারও জানা নেই! পরীমনি যেহেতু পাবলিক ফিগার, সেহেতু ওনাকে অবশ্যই সকল বয়সীদের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বিশেষ করে ওনার ভক্ত-দর্শকদের বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না। পরিস্থিতিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।’

পরীমনি যদি কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ জানাতে চান, তার শালীনতার মধ্যে থাকা জরুরি। প্রতিবাদে ভাষা বা সিম্বল ব্যবহারেরও একটা সীমারেখা থাকা উচিৎ। তাই এই বিষয়ে পরীমনিকে আরও সচেতন ও সতর্ক হওয়া জরুরি বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মিজান মালিক।