বাড়ি এক্সক্লুসিভ আফগান নারীদের পোশাক ফতোয়ার বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ

আফগান নারীদের পোশাক ফতোয়ার বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ

2
আফগান নারীদের পোশাক ফতোয়ার বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ

আফগানিস্তানে তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে এক অভিনব প্রতিবাদে নেমেছেন দেশটির নারীরা। আর এই প্রতিবাদের মঞ্চ হিসাবে তারা বেছে নিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমকে।তালেবানের নারী বিরোধী অবস্থান ও ফতোয়ার প্রতিবাদে আফগান নারীরা টুইটারে একটি প্রচার কর্মসূচি নিয়েছেন। এই কর্মসূচি শুরু হতেই রীতিমতো ভাইরাল।

আফগানিস্তানের নতুন তালেবান সরকার ঘোষণা করেছে , শরিয়তি আইন মেনে বোরখা পরেই মেয়েরা কাজে যোগ দিতে পারবেন। কিন্তু আফগান মেয়েরা অভিনব প্রতিবাদের মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন, শরীর ঢাকতে বোরখা লাগে না, সাধারণ ঐতিহ্যবাহী পোশাকই যথেষ্ট। 

তালেবানদের বোরখা পরার ফতোয়ার বিরুদ্ধে তারা শুরু করেছে অনলাইন প্রচার।  যেখানে আফগান মহিলাদের নানা রঙের ঐতিহ্যবাহী আফগান পোশাকে দেখা যাচ্ছে। রবিবার রাত থেকেই আফগানিস্তান-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা আফগান মহিলাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকের ছবি ছড়িয়ে পড়ে নেটমাধ্যমে। সেই সব ছবিতে দেখা যাচ্ছে- গোড়ালি ঢাকা পোশাক পরেছেন আফগান মহিলারা। জামার হাতা লম্বা । পোশাক রঙিন, কাউকেই ধূসর বা কালো রঙ ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।  সঙ্গে থাকা রঙিন ওড়না কেউ আলগা ভাবে মাথায় দিয়েছেন। কেউ আবার পোশাকের উপরই ফেলে রেখেছেন এক পাশে।

তালেবান ক্ষমতায় এসেই জানিয়ে দেয় নারীদের সব সময় থাকতে হবে আবায়া ও হিজাব দ্বারা আবৃত হয়েছে। শরীরের কোন অঙ্গ-প্রতঙ্গ দেখানো যাবে না।সেই সঙ্গে বন্ধ করেছে সহশিক্ষা। নারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারলেও, তাদের ক্লাস করতে হবে আলাদা শ্রেণিকক্ষ। একই নিয়ম চালু থাকবে স্কুল-কলেজেও।আর এসব নতুন নিয়ম ও ফতোয়ার প্রতি বিশ্বস্ত এমন নারীদের নিয়ে দুই দিন আগেই এক সম্মেলন করে তালেবান। সেখানে কালো কাপড়ে পুরো আবৃত হয়ে অংশ নেন নারীরা।

অনলাইন প্রচারে প্রত্যেকেরই মুখ অনাবৃত।  নিজেদের সেই সব ছবি তুলে নেটমাধ্যমে পোস্টও করেছেন সাহসিনীরা  । সেই ছবির বিবরণে হ্যাশট্যাগে লিখে দিয়েছেন তালিবানের উদ্দেশ্যে  একটি সতর্কবার্তা—#DoNotTouchMyClothes অর্থাৎ ‘আমার পোশাকে হাত দিও না’।

বিভিন্ন রঙের ঐতিহ্যবাহী আফগান পোশাকের ছবি পড়ে টুইটারে পোস্ট করছেন আফগান নারীরা। যার মাধ্যমে তারা বোঝাতে চাইছেন, শরীর ঢাকার জন্য বোরখা লাগে না।আফগান সংস্কৃতিতে যে ধরনের পোশাক শত শত বছর ধরে প্রচলিত, সেই সব পোশাক পরেও শরীর ঢেকে রাখা যায়। শরীরের কোন অংশই অনাবৃত থাকে না।রোববার থেকে একের পর এক রঙিন পোশাক পড়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে শুরু করেছেন আফগান নারীরা। তারপর একে একে সেই সব ছবি পোস্ট করতে থাকেন সামাজিক মাধ্যমে।

এর আগে পূর্ববর্তী শাসনকালে তালেবানরা আফগান নারীদের বোরখা পরিয়ে পর্দানসীন করে রেখেছিলো।  ১৫ অগাস্ট ফের কাবুলের মসনদে বসার পর নতুন তালেবান নেতারা সেই নিয়ম ফিরিয়ে এনেছেন। এর প্রতিবাদেই এবার  মুখ বন্ধ করে না থেকে নিজেদের মতো করে সোচ্চার হয়েছেন আফগান নারীরা, তাও  আবার সোশ্যাল মিডিয়ায়  গোটা বিশ্বের সামনে। 

সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশিরভাগ ছবির ক্যাপশনও প্রায় একই। আফগান নারীরা লিখেছেন, ‘এসবই হলো আমাদের আফগান সংস্কৃতি। আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক রঙিন এবং সুন্দর। আগে যে ছবি আপনারা দেখেছেন তা সত্যি নয়’।এখানে আগের ছবি বলতে দুই দিন আগে কালো বোরখা পড়া আফগান নারীরদের একটি মিছিলের ছবিকেই বোঝাতে চেয়েছেন তারা।

তালেবানরা আফগানিস্তান দখল করার পর থেকে, কট্টরপন্থীরা আফগানিস্তানে নারীর স্বাধীনতাকে খর্ব করে বেশ কয়েকটি বিধি নিষেধ আরোপ করেছিল । তালেবান প্রশাসন ঘোষণা করেছে যে, আফগান মহিলাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়াশোনা করার অনুমতি দেয়া হবে যেহেতু দেশটি নিজেকে পুনর্গঠন করতে চায়, কিন্তু লিঙ্গ-বিচ্ছিন্নতা এবং ইসলামিক ড্রেস কোড বাধ্যতামূলক হবে। তালেবান শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, শরিয়া আইনের ব্যাখ্যা অনুসারে যেখানে সম্ভব মেয়েরা  ছাত্রীদের পড়াবে এবং তাদের শ্রেণীকক্ষও  আলাদা থাকবে।