গ্রাহকের সঙ্গে ইভ্যালির ৩১১ কোটি টাকার প্রতারণা

২ লাখ গ্রাহকের সঙ্গে ইভ্যালির ৩১১ কোটি টাকার প্রতারণা। ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, শুধু গ্রাহকদের কাছে তাদের দেনার পরিমাণ ৩১১ কোটি টাকা। আর এই দেনা আছে মোট ২ লাখ ৭ হাজার ৭৪১ গ্রাহকের বিপরীতে। এ হিসাব গত ১৫ জুলাই পর্যন্ত। তিন দফায় তথ্য দেওয়ার দ্বিতীয় দফায় গ্রাহকদের কাছে দেনার পরিমাণ ও গ্রাহকসংখ্যা জানানোর শেষ সময় ছিল বৃহস্পতিবার।তবে ছয় মাসে এই দেনা শোধ করা হবে জানায় ইভ্যালি।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে গ্রাহকদের কাছে দেনার এক হিসেব জমা দেয় ইভ্যালি। নিজেদের হিসেবেই ইভ্যালি জানায়, ২ লাখ ৭ হাজার ৭৪১ জন গ্রাহকের অর্ডার করা পণ্য তাদের এখনও ডেলিভারি করা হয়নি। গ্রাহকদের পরিশোধিত মূল্য প্রায় ৩১০ কোটি টাকা। তবে অর্ডার করা পণ্য ব্যবসা দিয়ে মুনাফা অর্জন করে সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে পরিশোধ করা সম্ভব বলে দাবি করেন ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল।

প্রথম দফায় সম্পদ ও দায়ের পরিমাণের তথ্য ইভ্যালি ১৯ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল। আর তৃতীয় দফায় কোম্পানিটিকে ‘মার্চেন্টদের কাছে দেনার পরিমাণ, গ্রাহক ও মার্চেন্টদের দায় পরিশোধের সময়বদ্ধ পরিকল্পনা’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে জানাতে হবে আগামী ২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে।এক পৃষ্ঠার জবাবে আজ ইভ্যালি জানিয়েছে, একজন গ্রাহক এক বা একাধিক ক্রয়াদেশ (অর্ডার) দিয়ে থাকেন। গ্রাহকদের অধিকাংশই ইভ্যালির মোট কার্যকাল দুই বছর ছয় মাসে বিভিন্ন ক্রয়াদেশ দিয়েছেন এবং সফলভাবে পণ্য সরবরাহও পেয়েছেন।

জানা যায়, চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত এই দেনা হয় প্রতিষ্ঠানটির। এছাড়াও বিভিন্ন সেলার ও মার্চেন্টদের হিসেব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট দেনা ৫৪৪ কোটি টাকা। নিজেদের পেইড আপ ক্যাপিটাল ১ কোটি টাকা বাদ দিলে সর্বশেষ দেনা প্রায় ৫৪৩ কোটি টাকা।গ্রাহকদের কাছে থাকা দেনার বিষয়টিকে নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা বলে উল্লেখ করেছেন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী গ্রাহক। নূরে সিদ্দিকী নামে একজন গ্রাহক বলেন, আমার একটা বাইক অর্ডার করা আছে। সেই বাইক ৬ মাসের ওপরে পাই নাই। তাহলে এটা তো আমার সঙ্গে প্রতারণা। আমার মতো গ্রাহকদের টাকা দিয়েই তো তারা বিজনেস করেছে। কিন্তু আমাদেরকে পণ্য দেয়নি। তাহলে এটা প্রতারণা না?

ইভ্যালি বলেছে, সরবরাহ কার্যক্রমে ইভ্যালি নিজস্ব গুদাম থেকে বিভিন্ন তৃতীয় পক্ষ বা সরবরাহ কোম্পানির মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করে থাকে। তবে মোট সরবরাহের সামান্যই, অর্থাৎ ১২ থেকে ১৫ শতাংশ এভাবে সরবরাহ করা হয়। ক্রয়াদেশ করা বাকি পণ্যের সিংহ ভাগ মূলত বিক্রেতা বা সরবরাহকারী তাদের নিজ দায়িত্বে সরবরাহ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর ওপর তারা নির্ভরশীল। পরে ওই সরবরাহ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিভিন্ন সরবরাহ কোম্পানি পাঠালে তা ইভ্যালির সিস্টেমে সরবরাহ দেখানো হয়।

এদিকে ইভ্যালির বিরুদ্ধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে প্রায় ৭ হাজারের বেশি অভিযোগ জমা পড়ে বলে সেখানকার একটি সূত্র নিশ্চিত করেন। তবে এর মধ্যে ৫ হাজারের বেশি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয় এবং বাকি অভিযোগ নিয়েও কাজ চলছে বলে জানা যায়।

ইভ্যালি জানিয়েছে, সরবরাহের এই নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে বিভিন্ন তৃতীয় পক্ষের (সরবরাহকারী ও সরবরাহকারী কোম্পানি) ওপর নির্ভরতা থাকে। এসব ক্ষেত্রে গ্রাহক কোনো কারণে পণ্য না পেলে তাঁরা যদি সরাসরি নির্দিষ্ট বা সহনশীল সময়ের মধ্যে ইভ্যালির সঙ্গে যোগাযোগ না করেন, ইভ্যালি তখন সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরে নেন।

এ পর্যন্ত ৭০ লাখের বেশি ক্রয়াদেশের পণ্য সফলতার সঙ্গে সরবরাহ হয়েছে এবং ভোক্তাদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক বজায় আছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করে ইভ্যালি। বলেছে, ‘কিছুসংখ্যক গ্রাহক পণ্য পাননি, তা অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে পর্যাপ্ত সময় ও অনুকূল পরিবেশ পেলে ছয় মাসের মধ্যে ওই সব ক্রয়াদেশসহ সব ক্রয়াদেশের বিপরীতে পণ্য সরবরাহ করতে সক্ষম হব। এ পরিবেশ তৈরিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অগ্রণী ভূমিকার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’

এবিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া না গেলেও সম্প্রতি এক লাইভে মোহাম্মদ রাসেল ৬ মাসের মধ্যে সব গ্রাহকদের অর্ডার ডেলিভারি করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, একজন গ্রাহকের একটি অর্ডার বা রিফান্ড বাকি থাকবে না। সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে এগুলো ডেলিভারি করা হবে।

Exit mobile version