বাড়ি করোনা ভাইরাস করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে ভাইরাল কণার পরিমাণ ১২৬০ গুণ বেশি

করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে ভাইরাল কণার পরিমাণ ১২৬০ গুণ বেশি

1
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট

করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে ভাইরাল কণার পরিমাণ ১২৬০ গুণ বেশি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং বিজ্ঞানীদের মতে, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের যত ধরন পাওয়া গেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। করোনার এই ভ্যারিয়েন্ট মানুষের স্বাস্থ্য ও শারীরিক সুস্থতার মারাত্মক অবনতি ঘটাতে পারে উল্লেখ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি একে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ ঘোষণা করেছে।যা হোক, প্রশ্ন হলো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট কেন এতো উদ্বেগজনক ও বিপজ্জনক? এটিকে মারাত্মক সংক্রামক বলা হচ্ছে, কিন্তু করোনার এই নতুন ধরন কী কারণে বেশি সংক্রামক?

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে টিকা সুরক্ষা দিতে পারে?যেহেতু ডেল্টা দুটি মিউটেশনের মিশ্রণ, তাই অ্যান্টিবডির বিরুদ্ধে এর ক্ষমতা বেশি মনে করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার ‍নতুন ধরনগুলো বিশেষ করে ডেল্টা ‘ব্রেক থ্রো’ (টিকা নেওয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত) কেস সৃষ্টি করছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, করোনা টিকার পূর্ণাঙ্গ ডোজ নেওয়া ব্যক্তিদের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে গুরুতর অসুস্থার ঝুঁকি কম হতে পারে। গবেষকরা আরও দাবি করেছেন, যারা করোনা টিকার পূর্ণাঙ্গ ডোজ নিয়েছেন তাদের সংক্রমণ ঝুঁকিও কম।

বৈজ্ঞানিক ভাষায় করোনার এই ভ্যারিয়েন্ট বি.১.৬১৭.২ নামে পরিচিত। ‘ডাবল মিউটেশন’ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে করোনার অন্যান্য ধরনগুলোর তুলনায় বেশি সংক্রমণযোগ্য ও সংক্রামক করে তুলেছে। গত বছর ভারতে এই ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হয়। বর্তমানে বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে এবং সারা বিশ্বে এই ভ্যারিয়েন্টটিই সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত করছে। এ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে ‘উদ্বেগের প্রজাতি’ আগেই তকমা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রায় ১০০ দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে বলে কিছুদিন আগেই জানান হু প্রধান। যদিও শনিবার তৃতীয় ট্রায়ালের ফলাফল ঘোষণা করে ভারত বায়োটেক জানায়, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ৬৫.২ শতাংশ কার্যকর কোভ্যাক্সিন। কিন্তু দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালের এই গবেষণা রিপোর্টে চিন্তার ভাঁজ আরও বাড়ল।বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মানুষ থেকে মানুষে দ্রুত ও কার্যকরভাবে ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যমান ‘ই৪৮৪কিউ’ এবং ‘এল৪৫২আর’ নামক দুটি মিউটেশন উচ্চ সংক্রামক। এটি মানুষের ইমিউন সিস্টেম বা রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থায় সহজে প্রবেশ ও আক্রমণ করতে পারে। করোনার এই ভ্যারিয়েন্ট মানব হোস্ট কোষের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে অনেক বেশি দক্ষ এবং দ্রুতগতিতে নিজেকে বৃদ্ধি করতে পারে, যার ফলে করোনার মূল স্ট্রেইনের তুলনায় এটি শরীরে বেশি ক্ষতি করে।

এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ইমিউন সিস্টেমকে ফাঁকি দিতে পারে বলে সংক্রমণে বা টিকায় অর্জিত অ্যান্টিবডি ব্যর্থ হতে পারে। অর্থাৎ যারা মূল কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়েছেন অথবা টিকা নিয়েছেন তারাও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ঝুঁকিতে আছেন।করোনা সংক্রমণে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডি বা টিকা থেকে প্রাপ্ত অ্যান্টিবডিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের এই রূপ ইতিমধ্যে উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে উঠেছে। তবে বিজ্ঞানীরা এবার আরো ভয়ানক এক রূপ আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, চীনের গুয়াংডং প্রদেশের সেন্টার অব ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন পরিচালিত এক গবেষণায় ৬২ জন করোনা রোগীকে কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাদের ভাইরাল লোডের পরিমাণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনার মূল স্ট্রেইনে আক্রান্ত রোগীদের তুলনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীদের রক্তে ভাইরাল লোড ১২৬০ গুণ বেশি ছিল।গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের রোগীরা ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হওয়ার ৪ দিন পর উপসর্গ প্রকাশ পেয়েছে, অন্যদিকে করোনার মূল স্ট্রেইনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্তে গড়ে ৭ দিন সময় লেগেছে।

ভাইরাল লোড হলো, সংক্রামিত ব্যক্তির রক্তে ভাইরাস কণার পরিমাণ। এর মাধ্যমে রোগের তীব্রতা এবং ভাইরাসটি কতটা সংক্রামক হতে পারে তা বোঝা যায়। গবেষণায় জানা গেছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রামিত রোগীর মধ্যে উচ্চ পরিমাণে ভাইরাল লোড থাকার মানে হলো, এটি একজন ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিতে দ্রুত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার দিকে নিয়ে যায়। গবেষণার ফল আরো বলছে, করোনার মূল স্ট্রেইনের তুলনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দ্রুতগতিতে এবং বহুগুণে নিজের প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে। এটি কোনো ব্যক্তিকে মারাত্মক সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, যার ফলে রোগীর গুরুতর অবস্থা ও জটিলতা দেখা দেয়। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, সংক্রামিত ব্যক্তিদের মধ্যে উচ্চ ভাইরাল লোডই বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্ত সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছে।